পাহাড়ে পেঁপে চাষে ভাগ্যবদল, কমছে বেকারত্ব

পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে গেছে পার্বত্যাঞ্চল রাঙামাটির লংগদু উপজেলার অনেক খেটে খাওয়া কৃষক ও বেকার মানুষের। কৃষির সাথে জড়িত বা বেকার যুবকরা পেঁপে চষের মাধ্যমে হচ্ছেন স্বাবলম্বী। পাহাড়ের মাটিতে পেঁপের যেমন ভালো ফলন হয় তেমনি বছরজুড়ে ফল বা সবজি হিসেবি এর চাহিদা থাকায় দামও পাওয়া যায় ভালো। আর তাই পেঁপে চাষ অত্যন্ত লাভজনক হয়ে উঠেছে।

পেঁপে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়াদের মধ্যে একজন উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের মহাজন পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নাসির উদ্দিন (৩৫)। গত চার মাসে প্রায় চার লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ছোটখাটো ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছিলেন নাসির উদ্দিন। কিন্তু তেমন সফলতা পাননি। পরিবার ও ছেলে সন্তান নিয়ে কোনোমতে চলছিল সংসার। কিছুদিন পর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে পেঁপে চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে নিজ পতিত জমিতে প্রায় চারশত পেঁপে চারা রোপণ করেন। এখন ফলে ভরপুর হয়ে উঠেছে পেঁপে বাগান। বাগানটি কৃষি অফিস প্রদর্শনীর জন্য রেখেছে। এ বাগান দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন স্থানীয় বেকার যুবক ও কৃষকরা।

নাসির উদ্দিন বলেন, ২শ শতক জমিতে পেঁপে আবাদ করেছি। চারার বয়স এখন নয় মাস। ফলন খুব ভালো হয়েছে। গত চার মাসে চার লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। বাগানে যে পরিমাণ ফলন আছে, তাতে আরও দশ-বারো লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি। বাগান করতে খরচ হয়েছে পাঁচ লাখ টাকার মতো। পেঁপে আবাদ করে আমি এখন স্বাবলম্বী।

তিনি বলেন, পাহাড়ি উর্বর জমিতে প্রচুর সবজি চাষ হয়। তবে সবজির জন্য হিমাগার না থাকায় প্রচুর সবজি নষ্ট হয়। চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। আগে নদীতে পানি থাকায় বিভিন্ন বাজারে যাতায়াত করা সহজ ছিল। চাষিরা নিজেদের উৎপাদিত সবজি উপজেলার মাইনী বাজারসহ বড় বড় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। অল্প ভাড়ায় ইঞ্জিনচালিত বোটে যাওয়া যেতো। বর্তমানে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় স্থল পথে মোটরসাইকেল বা মাহিন্দ্র দিয়ে অতিরিক্ত খরচ বহন করে উৎপাদিত ফলন বাজারজাত করতে হয়। এজন্য সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে পাইকারদের কাছে। পাইকারদের বেঁধে দেওয়া দামেই সবজি বিক্রি করতে হয়। এতে একদিকে যেমন ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা অন্যদিকে সবজির মূল মুনাফা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে চলে যাচ্ছে।

উপজেলার গাউসপুর এলাকার শাহ্ আলম স্থানীয় কৃষক। চার মাস আগে ১শ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করেন। বর্তমানে তার বাগানে পেঁপের ভালো ফলন হয়েছে।

তিনি বলেন, ১০০ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করতে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কোনও গাছে ২০ কেজি আবার কোনও গাছে এক মণ পেঁপে ধরেছে। আশা করছি, খরচ বাদে দ্বিগুণ লাভ হবে। পেঁপে চাষে কষ্ট কম। ভালো ফলন হওয়ায় লাভ বেশি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেকের পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে গেছে।

লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, লংগদুতে এবার ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। এ থেকে ৫০০ টন ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। এবার পেঁপের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বছর এখানে পেঁপের চাষাবাদ বাড়ছে। এখানকার মাটিও পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে দুই জাতের পেঁপের চাষ হয়। এর মধ্যে একটি রেড লেডি অপরটি গ্রিন লেডি। গ্রিন লেডি জাতের পেঁপে শুধুমাত্র সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য। রেড লেডি পেঁপে সবজির পাশাপাশি পাকিয়ে খাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পেঁপে ও অন্যান্য চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। চাষিদের বাগান তদারকির জন্য মাঠ পর্যায়ে একাধিক কৃষি কর্মকর্তা কাজ করছেন।

কয়েকজন চাষী জানিয়েছেন, পেঁপের প্রতিটি চারা ২০-২৫ টাকায় কিনতে হয়। আবার কোনও কোনও চাষি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন।

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, এবার শুধুমাত্র বগাচতর ইউনিয়নে ৩০ হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কমবেশি পেঁপের আবাদ হয়। উপজেলার অনেক বেকার যুবক পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এতে কমছে বেকারত্ব। পেঁপে চাষ অনেক লাভজনক। এজন্য বেকার যুবকরা পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০ কেজি করে পেঁপের ফলন হয়। আমরা নিয়মিত পেঁপে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

কৃষিবিদগণ বলেন, ফল ও সবজি হিসেবে পেঁপে পছন্দ করে সবাই। বাণিজ্যিক আবাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী ফসল। সাধারণত রোপণের ছয় মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এক একর জমি থেকে সাধারণত ছয় মাস পর লক্ষাধিক টাকার পাকা পেঁপে এবং অর্ধ লক্ষাধিক টাকার কাঁচা পেঁপে বিক্রি করা সম্ভব। সঠিকভাবে যত্ন নিলে দুই বছর পর্যন্ত একটি পেঁপে বাগান থেকে টানা ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব।

তারা আরও বলেন, বসতবাড়ির আশপাশে কিংবা ছাদবাগানে একটি অথবা ২টি পেঁপে গাছ রোপণ করলে আমরা সারা বছর ফল ও সবজি খেতে পারি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।