পর পর দুইবারের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ভারী বর্ষণে আবারও ৩য় দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলা। গত দু’দিনের বৃষ্টিতে বাড়তে শুরু করেছে বন্যার পানি। একই সঙ্গে আতঙ্ক বাড়ছে পানিবন্দি ও বানভাসিরা। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে দেখা গেছে, উপজেলার কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের হোসেনপুর, রাজাপুর, সালামপুর, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনারগাঁও, বগাচতর ইউনিয়নের গাউসপুর, ফরেস্ট অফিস, ছোট লোহাকাঠ বাগান, মাইনীমূখ ইউনিয়নের এফআইডিসি টিলা, মাদ্রাসা টিলা, পূর্ব জারুল বাগান, সদর ইউনিয়নের ঝর্নাটিলা, ভাইবোন ছড়া ও আটারকছড়া ইউনিয়নের লেমুছড়ি সহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে আছে বসতঘর ও সড়ক।
বন্যার্ত লংগদু সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিলা গ্রামের আসমা খাতুন বলেন, বন্যার পানি আবার বাড়ছে। মানুষ জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। গত বন্যায় আমার প্রায় এক একরের ফসলী জমি ভেসে গেছে। এছাড়া খামার ও সবজির ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সব শেষ এখন আর কিছুই বলার নাই।
কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের হোসেনপুর এলাকার বাসিন্দা সালমান খান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়িতে এসেছি মাত্র কয়েক দিন হয়। অনেক কিছু গুছিয়ে বসবাসের উপযোগী করেছি। গতকালের বৃষ্টিতে এখন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অবস্থা। আল্লাহ সহায় নাহলে আমাদের আর কিছুই করার নাই।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিক্রম চাকমা বলি জানান, টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় আবারো লংগদুতে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ফের লংগদু উপজেলা বন্যার কবলে পড়ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ রাখছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন। বৃষ্টি না হলে আমাদের বন্যা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি। পাশাপাশি বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হবে।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, লংগদু উপজেলার ৭ ইউনিয়নের প্রায় হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন। ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন শতশত মানুষ।
এদিকে জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হচ্ছে। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে।
অন্যদিকে কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র জানা যায়, হ্রদের পানি ধারণ ক্ষমতার কাছাকাছি চলে এসেছে। বর্তমানে হ্রদে ১০৮ দশমিক ৫৩ মিন সি লেভেলে (এমএসএল) পৌঁছে গেছে। হ্রদে পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।
তবে লংগদুবাসীর দাবি, এখনই কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট খুলে দিয়ে বর্তমান পানির স্তর থেকে কমপক্ষে ৮-১০ ফিট কমিয়ে দিলে লংগদু সহ বাঁধ সংলগ্ন আশপাশের নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। সরকার ও বাঁধ কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের এখন এমনটাই দাবি বলে জানান পানিবন্দি লংগদুবাসী।
প্রসঙ্গত, হ্রদের পানি কমাতে গত ২৫ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন বাঁধের ১৬টি গেট খোলা ছিল। পানির স্তর ১০৮ এমএসএলের নিচে চলে আসায় ৯ সেপ্টেম্বর গেট বন্ধ করে দেয়া হয়।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।