সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার বেশ কয়েকটি পাহাড়ি অঞ্চলের জনমানুষ। পাহাড়ি পল্লিগুলোতে গভীর নলকূপ ও বিশুদ্ধ পানির যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। বিশেষ করে খাওয়া ও ব্যবহারের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খাওয়ার পানির সংকট মেটাতে খালের পানি পান করছে অনেকে। এছাড়াও যথেষ্ট পানির ব্যবস্থা না থাকায় চাষাবাদে অনগ্রসর হচ্ছেন এই জনগোষ্ঠী।
জানা গেছে, লংগদু সদর ও আটারকছড়া ইউনিয়নের গদাবাইন্যা ছড়া, রামতনু ছড়া, শিলাছড়া, উদয়পাড়া, কাঁকড়া খিয়া, শিলাছড়ি, পাঠান টিলা ও দাদীপাড়াসহ ৭-৮টি এলাকায় বসবাস করেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর খেটে খাওয়া ৫ শতাধিক পরিবারের হাজারো সাধারণ মানুষ। পানির সংকট থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে খাল, ঝিরি ও নদীর দূষিত পানি পান করছেন। যার ফলে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আটারকছড়া ও সদর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকার নারী-পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই প্রতিদিন খাওয়ার পানির জন্য পাহাড়ি কূপ, ছড়া বা ঝিরিতে কলসি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। গ্রীষ্মে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না তারা। এসব ঝিরি বা কূপে শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায় ১-২ কলসি, অনেক সময় তাও পাওয়া যায় না।
গদাবাইন্যা ছড়া, উদয়পাড়া ও কাঁকড় খিয়া এলাকার তুষার চাকমা, রিমেল ও জয়রিতা চাকামা জানান, পাড়ায় দু-একটি নলকূপ আছে, তবে তা নষ্ট হয়ে গেছে গত বছর। পানির তৃষ্ণা মেটাতে খাল, ছড়া, কূপ থেকে পানি নিয়ে যেতে হয়।
শিলাছড়ি এলাকার পাহাড়ি নারীরা জানান, পুরো এলাকায় কয়েকটি নলকূপ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে কেবল একটি নলকূপে পানি পাওয়া যায়। ফলে বছরের অধিকাংশ সময়ই আমরা পানির সংকটে থাকি। যেন দেখার কেউ নেই।
তারা আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতির কারণে এখানে বিশুদ্ধ ও সারা বছর পাওয়া যায় এমন পানির প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়নি। সংকট মেটাতে আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ঘোলা পানি খাচ্ছি।
সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, এলজিইডি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের দেওয়া রিংওয়েল, নলকূপগুলো অল্প গভীরতায় স্থাপন করা হয় বর্ষা মৌসুমে, যার কারণে শুষ্ক মৌসুম এলে পানি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। ফলে অনেকে সরাসরি ঝিরির পানি ব্যবহার ছাড়া করার কিছুই নেই!
স্থানীয় আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অজয় চাকমা মিত্র বলেন, চেষ্টা করছি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার পানির সংকট মেটাতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। পাহাড়ের অনেক লোক ২-৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে আসে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত এ পানি সংকট দূর করা হবে।
এ বিষয়ে লংগদু উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা নিয়ে সব এলাকায় সরকারি নলকূপ স্থাপন করছি, এখনো কিছু দূর্গম এলাকা বাকি আছে, তবে পর্যায়ক্রমে হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, যে এলাকায় যে ধরনের টিউবওয়েল প্রয়োজন আমরা চেষ্টা করছি পাহাড়ি অঞ্চলের কথা বিবেচনা করে সেই ধরনের টিউবওয়েল স্থাপন করা।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।