পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজ—কেউ কথা রাখেনি, সচল হয়নি ৫ বছরেও

২০১৭ সাল। রাঙামাটি জেলা জুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে পাহাড় ধ্বস, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, সড়ক ও নৌপথ চলাচল বন্ধ ও ব্রিজ-কালভার্ট ধ্বস। প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের কারনে রাঙামাটি শহরস্থ ভেদভেদি, রাঙাপানি, কাপ্তাই, কাউখালী, রাজস্থলীতে ঘরবাড়িতে মাটি চাপা পড়ে নিহত পরিবারের সদস্যদের আর্তনাত ও শোকার্ত কথা বলছিলেন ঘাগড়া দেওয়ানপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও কলাবাগান যৌথ খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বর্ণ সেন চাকমাসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা।

বলেছিলেন, কাউখালী উপজেলাধীন ৩ নম্বর ঘাগড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাগড়া দেওয়ানপাড়া এলাকাটি প্রায় ১০০টি পরিবারের বসবাস। বিগত ২০১৭ সালে প্রবল বৃষ্টিপাতে ঘাগড়া ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া, চম্পাতলী, জুনমাছড়া, চেলাছড়া সহ আরো কয়েকটি এলাকাজুড়ে বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ সহ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়।
এসময় পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে বন্যা কবলিত হয়ে ঘাগড়ার দেওয়ানপাড়া এলাকার একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম ২২ মিটার দৈর্ঘ্যের দেওয়ানপাড়া গার্ডার ব্রীজটি একপার্শ্বে আরসিসি পিলারের মাটি সরে গিয়ে আরসিসি পিলার ও ঢালাই ভেঙ্গে বন্যার পানিতে ব্রীজের অর্ধেকাংশ তলিয়ে যায়।
সেদিন থেকে ব্রীজটি সম্পূর্ণ ভাবে এলাকাবাসী ও পার্শ্ববর্তী স্থানীয় লোকজন চলাচল করতে পারছেন না। সেজন্য অতিশীঘ্রই ঘাগড়া-বড়ইছড়ি গার্ডার সংযোগ সড়কটি সংস্কারের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা পরিষদসহ যথাযথ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টির নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাগড়া-বড়ইছড়ি মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে দেওয়ানপাড়া সড়কের দীর্ঘ ২২মিটার দৈর্ঘ্যের গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ কাজ বিগত ১০ই অক্টোবর ২০১৩ সালে ভিত্তির প্রস্তর স্থাপন করেন আওয়ামী লীগ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি। এই গার্ডার ব্রীজটি নির্মাণ কাজে রাঙামাটি জেলা এলজিইডির তত্ত্বাবধানে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

এই বিষয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শিবমনি চাকমা প্রতিবেদককে জানান, ২০১৩ সালে ভিত্তির প্রস্তরের পর ২০১৪ সালে মার্চ-এপ্রিলে কাজ সম্পন্ন করে ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সংযোগ সড়কের সঙ্গে দেওয়ানপাড়ার সড়কটি চালু হয়। দীর্ঘ ৩ বছর সড়কটি ব্যবহারের পর বিগত ২০১৭ সালে জুলাই-আগস্টে প্রবল ভারী বৃষ্টিপাতে ঘাগড়ায় ভারী বৃষ্টিপাতে ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, ব্রীজ-কালভার্ট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। তখনই ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের দেওয়ানপাড়ার সংযোগ সড়কের গার্ডার ব্রীজটি আরসিসি পিলারের গোড়ায় মাটি সরে গিয়ে ঢালাইয়ের পিচসহ অর্ধেকাংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলেন, এই ব্রীজে দাঁড়িয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুদ্দোহা চৌধুরীসহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী প্রচারনাকালে এই ব্রীজটি সংস্কারের কথা জানানো হয়। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান শপথ গ্রহনের ৩ বছর অতিবাহিত হলেও দেওয়ানপাড়া সড়কের সংযোগ ব্রীজটি সংস্কারের কেউ খোঁজ খবর রাখেননি।
ফলে উপজেলা চেয়ারম্যানে অপেক্ষা না করে দেওয়ানপাড়া এলাকাবাসীরা প্রত্যেক বছর ১০-১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে গাছ, বাঁশ ও মাঠি ভরাট করে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করতে অস্থায়ী ভিত্তিতে সংযোগ সড়কের গার্ডারের ব্রীজটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু এভাবে প্রত্যেক বছর স্থানীয়দের উত্তোলিত অর্থ দিয়ে ব্রীজের সংস্কারের কাজ করা সম্ভব না। তাই ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সংযোগ সড়কের দেওয়ানপাড়া গার্ডার ব্রীজটি পুনরায় সংস্কার করতে প্রধানমন্ত্রী সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ঘাগড়া ইউনিয়নের ৮নম্বর ওর্য়াডের দেওয়ানপাড়ার স্থানীয় এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে, কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুদ্দোহা চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ভাইস চেয়ারম্যান অংপ্রু মার্মা জানান, এসব রাস্তা, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণের কাজ জেলা পরিষদের দায়িত্ব।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।