প্রত্যেককে গ্লোবাল সিটিজেন হিসেবে তৈরি হতে হবে—নওফেল

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আমাদের দেশে লাখ লাখ স্নাতক ডিগ্রিধারী রয়েছেন। কিন্তু সে তুলনায় চাকুরি সীমিত। সরকারি-বেসরকারি সবক্ষেত্রেই পরিস্থিতি সমান। আর তুমুল প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে নিজেকে গ্লোবাল সিটিজেন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন তিনি।

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে থিওরিটিক্যাল পড়াশোনা করানো হয় তা চাকুরির জন্য পর্যাপ্ত নয়। চাকুরির জন্য বাস্তবতার সাথে মিলে এমন জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কম্পিউটার দক্ষতা, কমিউনিকেশন স্কিল, বিশ্লেষণ দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা—আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সবাইকে এসব দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে বিশ্ব বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু নিজ দেশের অর্থনীতি বা পরিবেশ বিবেচনা করে পড়াশোনা করানো হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যেসব কোর্স শেখানো হয় তা পুরো পৃথিবীতে প্রয়োগযোগ্য। তবে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চাকুরির জন্য যথেষ্ট নয়। এরজন্য আরও কিছু দক্ষতা অর্জন করা দরকার। যার জন্য আমরা শতাধিক কোর্স চালু করেছি।

বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ভারত কিংবা শ্রীলংকা থেকে প্রকৌশলী বা উচ্চ পর্যায়ের লোক দিয়ে থাকেন। কিন্তু বিষয়টি কেন হয় তা জানার চেষ্টা করেছেন নওফেল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের মতামত তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারত থেকে একজন লোক নিয়োগ দিলে তাকে ২৪ ঘন্টা পাওয়া যায়। ভারত বা শ্রীলংকা থেকে যাদের নিয়ে আসা হয় তারা বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী। প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তারা ইংরেজি আরবি বা বাংলা ভাষায় ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করেন। প্রয়োজনে কোন প্রজেক্টকে সহজ বা বিশ্লেষণ করে তুলে ধরেন। তারা একনিষ্ঠতার সাথে কাজ করে থাকেন। যা বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ দিলে পাওয়া যায় না

তিনি বলেন, আমাদের ছেলেদের থিওরিটিক্যাল নলেজ ভরপুর। তাদের বাস্তবিক জ্ঞান বা দক্ষতা কম। তাই চাকুরির বাজারে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে বহুমাত্রিক দক্ষতা ও ভাষা জানতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সফট স্কিল অর্জন করতে হবে। শিক্ষানবিশ বা বিনা বেতনে হলেও কাজে লেগে যেতে হবে। তাহলে একটা সময় দক্ষতার জোরে বিশ্ববাজারে কদর বাড়বে।

এ সময় উপমন্ত্রী সকলের মানসিকতায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের কোন কাজ ছোট করে দেখা উচিত নয়। নিজের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। সকল কাজের সাথে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। একজন ব্যক্তি যিনি জুতার কাজ করেন, তার সন্তান যদি বড় হয়ে শিক্ষিত হন তাহলে সেই জুতা নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করতে পারেন। তাহলে নতুন উদ্যেগ ও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর তিনি যদি বাবার পেশাকেই আগ্রাহ্য করেন তাহলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না।

এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ এবং বিজিসি ট্রাস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা ও বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমেদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এএফএম আওরঙ্গজেব।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।