প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে ঠাঁই হচ্ছে আনোয়ারার ১৩০ পরিবারের

মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে শেখ হাসিনার সরকার ‘ঘর নাই বাড়ি নাই’ এমন পরিবারগুলোকে মাথা গুঁজার ঠাঁই করে দিতে দেশব্যাপি গৃহহীনদের জমিসহ গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের আনোয়ারায় নতুন করে আরও ১৩০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতি ২ শতক জমিতে প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হবে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ১৩০ গৃহহীন পরিবারের জন্য ২৬০ শতক জমিতে নির্মিত হচ্ছে পাকা ঘর।

আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ২১৬টি পরিবারকে ঈদ উপহার হিসেবে জমিসহ মুজিব বর্ষের নতুন ঘর উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে গৃহহীন পরিবারগুলোকে ঘরগুলো বুঝিয়ে দেবেন জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন।

রোববার (এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার বারখাইন ইউনিয়ন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রামে) নির্মিত ঘর পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ সময় তিনি বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন। পরিদর্শনে সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) মাসুদ কামাল, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হাসান চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম.এ মান্নান চৌধুরী।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে বর্তমান সরকারের। প্রথম দফায় গত বছরের ২৩ জানুয়ারি ২৫ পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হয়। দ্বিতীয় দফায় গত মে মাসে আরও ৪০ পরিবারকে ঘর উপহার দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত দুই দফায় ৬৫ পরিবারকে ঘর দিয়েছে সরকার। তৃতীয় দফায় ২৬ জুন মঙ্গলবার আরও ১৩০ পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করবেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের মতো মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের অংশ হিসেবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির প্রচেষ্টায় উপজেলার ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ৬০০ ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রতিটি ঘরে দুইটি বেড রুম, রান্নাঘর, টয়লেট ও একটি বারান্দা নিয়ে ঘর ও আশপাশের জমি মিলিয়ে দুই শতক জমি দেওয়া হবে প্রতিটি পরিবারকে। টিনশেডের এ ঘরে একটি পরিবার স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে আগে ব্যয় ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

ঘর গুলো উপকূলের গৃহহীনরা ও বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া পরিবার গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। ‘আশ্রয়নের অধিকার, প্রধানমন্ত্রীর উপহার,’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে দুই দফায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) জামিরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এসব পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

ঘর পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালী সফরে গিয়ে আশ্রয়হীনদের প্রথম পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর কন্যা দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বাসস্থান নিশ্চিতের ঘোষণা দেন। সরকারি উদ্যোগে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ভূমি ও গৃহ প্রদানের এ নজির পৃথিবীর বুকে অনন্য। একই দিনে এতসংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে জমিসহ ঘর দেয়ার নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

জেলা প্রশাসক বলেন, ১ম ও ২য় পর্যায়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী ৩য় পর্যায়ে আগামীকাল (মঙ্গলবার) সারাদেশে ৩২ হাজার ৯০৪ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর বরাদ্দ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রাম জেলায় ৩য় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ১ হাজার ২১৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদান করা হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্ধারিত নমুনা ও ডিজাইন অনুসরণ করে উন্নতমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে এ সকল টেকসই এবং মানসম্মত ঘর ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলায় ১৩০ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদান করা হবে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, ‘মুজিববর্ষে তৃতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ঘরগুলো নির্মাণ সম্পন্ন করে ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নির্মিত ঘর গুলো সুবিধাভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর পেয়ে মহাখুশি উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন অতি দরিদ্র মানুষরা। ২৬ জুন ঈদ উপহার হিসেবে জমিসহ মুজিব বর্ষের নতুন ঘর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।