প্রধানমন্ত্রী দেশকে সামাজিক কল্যাণরাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চান: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ষাটোর্ধদের জন্য পেনশন স্কিম প্রধানমন্ত্রীর একান্তই নিজস্ব চিন্তার ফসল। এটির জন্য বিএনপিসহ কোন রাজনৈতিক দল কখনো দাবি করেনি, সুশীল সমাজ, রাত বারোটার পর যারা টেলিভিশনের পর্দা গরম করেন কিংবা যারা সময়ে-অসময়ে, কারণে-অকারণে জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেন তারাও বলেনি। এভাবে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশকে একটি সামাজিক কল্যাণরাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চান।

তিনি বলেন, বিএনপি তাদের নয়াপল্টনের অফিসে বারো বছর আগে থেকে আমাদের সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বাজাচ্ছে। আরো কয় বছর বাজাতে হয় সেটা জনগণ ঠিক করবে। তারা বিদায় ঘণ্টা বাজানো সত্ত্বেও জনগণ গত দুই নির্বাচনে আমাদেরকে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে আগামী নির্বাচনেও জনগণ আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিবেন।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটির সুপারিশকৃত ১০ জনের নাম প্রকাশের জন্য বেসরকারি সংস্থা সুজনের দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সুজন এরা কারা? সুজন একটি এনজিও। এই এনজিওর সারাদেশে শাখাও নাই, প্রশাখাও নাই। এরা ব্যক্তি বিশেষ নিয়ে একটা এনজিও। বিভিন্ন সংস্থা থেকে তারা তহবিল সংগ্রহ করে চলে, এমনকি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকেও তারা একসময় তহবিল নিয়েছিল। যেটি নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সুজন যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছে, আর গণমাধ্যমেও কেন এটিকে ফলাও করে প্রকাশ করা হয় সেটিও আমার প্রশ্ন?

তিনি বলেন, সার্চ কমিটি যে দশজন সিলেক্ট করবে আইন বলে এটি তাদের ক্ষমতা। সেটি প্রকাশ করবে কি করবে না একান্ত সার্চ কমিটির ব্যাপার। সেটির জন্য সুজন বলার কে? সুজন কি নির্বাচন করে? নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুজন কি এখানে স্টেকহোল্ডার? তাতো নয়। এখানে যারা নির্বাচন করেন তারাই হচ্ছে স্টেক হোল্ডার। সুজনের এত দাদাগিরি কেন সেটিই আমার বড় প্রশ্ন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, যেই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এবং যেভাবে অংশগ্রহণমূলকভাবে এবার নির্বাচন কমিশন গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, আইন বলে সেটি অভাবনীয়। ৭৫ বছরের গণতন্ত্রের দেশ ভারতসহ কয়েকশ বছরের পুরনো গণতন্ত্রের দেশেও এভাবে করা হয় না। এখানে সবার সাথে বসা হয়েছে। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিকদের বিভিন্ন ফোরাম, সুজনসহ যারা টকশো করেন তাদের সাথেও বসা হয়েছে। বিএনপি ঘরনার বুদ্ধিজীবীরাও সেখানে গেছেন। এরপর যে নামগুলো জমা পড়েছে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতাসহ দেশের তিন কোটি মানুষকে নানাভাবে ভাতা দিচ্ছে। বাংলাদেশে স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা আছে, ইউরোপেও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা নাই। ষাটোর্ধ সবাই যাতে পেনশনের আওতায় আসে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী দ্রুত একটি আইন প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ষাটোর্ধ সবাই এটির আওতায় আসবে। বিদেশে আমাদের কর্মীরা যারা কাজ করেন তারাও এর আওতায় আসবেন।

নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী অবশ্যই একটি নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। বর্তমান সরকার গত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিল, সেই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কখনো সরকারের অধীনে হয় না, নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনকালীন সময়ে কোন মন্ত্রী এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও একজন কনস্টেবল বদলি করারও ক্ষমতা থাকে না। তখন সরকার শুধুমাত্র রুটিন কাজ করতে পারে। সুতরাং বিএনপি যে ধোঁয়া তুলছে নির্বাচনকালীন সবাইকে নিয়ে একটি সরকার গঠন করার সংবিধান অনুযায়ী সেটি করার কোন সুযোগ নাই।

বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, তাদের বিদায় ঘণ্টা বাজা শুরু হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ওনারা স্বপ্ন দেখেন ষড়যন্ত্রের, কোনো জায়গা থেকে একটা চিঠি আনলে ওনারা পুলকিত হন। কোনো জায়গা থেকে খালেদা জিয়ার জন্য একটা চিঠি এলে, কাউকে ধরে একটা বিবৃতি আদায় করতে পারলে ওনারা পুলকিত হন। রিজভী সাহেবরা যেই ঘণ্টা বাজাচ্ছেন, সেই ঘন্টা ওনারা বাজাতে থাকুক, জনগণ আমাদের সাথেই আছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।