প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল: আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল আতঙ্কে চট্টগ্রামের আনোয়ারার উপকূলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত উপকূলে আঘাত হানার খবরে উপকূলের নদী ও সাগরগর্ভে বসবাসরতদের মাঝে বেড়েছে গেছে মহা আতঙ্ক।

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন থেকে গতকাল রাতে উপকূলে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে এবং উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপকূলের মানুষের মাঝে আতঙ্কের চাপ, আনোয়ারা উপজেলার পূর্ব গহিরায় বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরতদের আতঙ্ক বেড়েছে দ্বিগুণ। অনেকেই দিনের আলোতে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। সাগরের পানিতে বেড়েছে ঢেউও।

জানা যায়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামে সব চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানী ঘটে আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর, জুইঁদন্ডী ও বারশত ইউনিয়নে। এসময় আনোয়ারায় অন্তত ১০ হাজার লোক মারা যায়। এরপর থেকে ঘূর্ণিঝড়ে সতর্ক সংকেতের নাম শুনলেই এই এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। এছাড়াও উপকূলে স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় এই আতঙ্ক বেড়েছে বহুগুণে।

জুঁইদন্ডীর চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ ইদ্রিছ বলেন, “বেড়িবাঁধের ভাঙন এলাকায় কোন ব্যবস্থা না করায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল আতঙ্ক বেশি দেখা দিয়েছে। পানি বাড়লে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হবে।”

রায়পুরের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, “শনিবার দুপুর থেকে নদী ও সাগরে পানি বেড়েছে। ২০১৮ সালের আগে পুরো রায়পুর ইউনিয়ন অরক্ষিত ছিল, এখন সেখানে ব্লক বসানো হয়েছে। তবে পূর্বগহিরা ঘাটকূল ও সরেঙ্গা এলাকায়র কিছু অংশে মাটির কাজ হলেও টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরানো ব্যবস্থা করেছি। পরিস্থিতি বুঝে গাড়ি দিয়ে মানুষ সড়িয়ে নেওয়া হবে।”

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন ও কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেছেন, “ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবেলায় উপজেলায় সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে গঠিত দল ও প্রশাসনের লোকজনকে প্রস্তত রাখা হয়েছে। উপকূলে মাইকিং, সাইক্লোন সেল্টার ছাড়াও মুজিব কিল্লাহ্ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন গুলো প্রস্তত রাখা হয়েছে।”

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ দেশের ৯ জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। রবিবার (২৬ মে) সকালে ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে দেওয়া ১০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তাতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে নতুন করে ৯ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে হবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমানের স্বাক্ষর করা ১০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোর নিচু এলাকা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।