প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স

রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফআইডিসি) অধীনস্থ লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স (এলপিসি)। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৭ সালে ২৪ দশমিক ১০ একর জায়গার উপর ৩৫ দশমিক ৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৫৫ বছরের এই প্রতিষ্ঠানটি পূর্বে নানা লোকসানে জর্জরিত ছিলো। তবে বর্তমানে জৌলুস হারানো এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি নানা উদ্যোগ এবং আধুনিক প্রযুক্তির উৎপাদন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কারখানাটিতে বর্তমানে তৈরি হচ্ছে আধুনিক মানের বিভিন্ন আসবাবপত্র। যেগুলোর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া সরকারি সহয়তা পেলে কারখানাটি আরো সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্যাপক লাভবান হবে বলে আশা করছেন কতৃপক্ষ।

কাপ্তাই লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধনের পর পরই সারাদেশেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো। এছাড়া তখন প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন এর আওতায় তৈরি করা হতো গাছের বৈদ্যুতিক খুঁটি, রেলের স্লিপার, সেতুর পাটাতন সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। তবে যুগের বিবর্তনে এসব পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে এবং সরকারের সুদৃষ্টির অভাবে অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি। পাশাপাশি ব্যস্ততম প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ জায়গা ও ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় ধ্বংস হচ্ছিলো।

তবে বতর্মান সরকারের মহৎ উদ্যোগে এবং সুদক্ষ পরিচালনায় আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আবারো আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সফলতা পেয়ে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি রাজস্ব প্রদানের পর ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা আয় করেছে। উৎপাদন কৌশল বদলে আধুনিক মানের আসবাবপত্র তৈরিতে স্থাপন করা হয়েছে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। যেগুলো ব্যবহার করে নিখুঁত ভাবে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন আসবাবপত্র।

এদিকে একসময় বনের কাঠ ব্যবহার করলেও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের জীবনচক্র হারানো বিভিন্ন গাছ এবং বন বিভাগ কর্তৃক জব্দকৃত নিলামে পাওয়া বিভিন্ন ভালো মানের কাঠ। কাঠ সংগ্রহের পর কারখানায় গাছ চিড়াইয়ের পরে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সিজনিং, ট্রিটম্যান্টের মাধ্যমে কাঠের স্থায়ীত্ব বাড়ানো হচ্ছে। যার ফলে গুণগত মানের আসবাবপত্র, দরজা, চৌকাঠ ইত্যাদি পন্য তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

বিএফআইডিসির কাপ্তাই লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স এর ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা বর্তমানে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক গুনগত মান বজায় রেখে আসবাবপত্র তৈরি করে সরবরাহ করে আসছি। এতো দিন আমরা শুধু বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক আসবাবপত্র তৈরি করে সরবরাহ করতাম। তবে আমাদের বানিজ্যিক ভাবে পণ্য উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেন আমাদের তৈরি বিভিন্ন মানসম্মত আসবাবপত্র সাধারণ মানুষ ব্যবহারের সুযোগ পায়।

বিএফআইডিসির কাপ্তাই লাম্বার প্রসেসিং কমপ্লেক্স এর সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক তীর্থজিৎ রায় জানান, এক সময়ের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটি আমার নিত্য নতুন আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দিন দিন ভালো ও গুনগত মানের আসবাবপত্র তৈরি করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছি। বিশেষ করে সরকার এবং মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমাদের প্রতিষ্ঠান দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে এবং লাভবান হচ্ছে। তবে সরকারের আরো কিছু সহয়তা পেলে এই কারখানাটিকে বিবিধ সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরো লাভবান করা সম্ভব হবে এবং পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানে অধিক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে আধুনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়িত্বশীল আসবাবপত্র তৈরি করা হচ্ছে। সরকার যদি এখন ক্রয় সংক্রান্ত নীতিমালায় আমাদের প্রতিষ্ঠানকে ট্যাগ করে দেন তাহলে আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবেনা। ইতোমধ্যে আমরা অত্যান্ত সুনামের সাথে বিভিন্ন বিদ্যালয়, কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সরবরাহ করেছি এবং যথেষ্ট সুনামও অর্জন করেছি। তাই এই বিষয়ে আমি সরকার এর নিকট সহযোগীতা কামনা করছি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।