চট্টগ্রামের রাউজানে নিজ শয়নকক্ষ থেকে নুর জাহান আকতার মনির (২৫) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্বামী এনামকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এনামের পরকীয়ায় আপত্তি জানানোয় মনিকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে তার বরাতে জানায় র্যাব। আসামি মো. এনাম রাউজানের পূর্বটিলা জানিপাথের জাবেদ আলীর ছেলে।
মঙ্গলবার (১০) অক্টোবর দুপুরে র্যাব-৭এর উপ-অধিনায়ক মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসময় র্যাব-৭এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার উপস্থিত ছিলেন।
মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান বলেন, এনামের সঙ্গে গত ৪ বছর আগে ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের হাসান আলীর মেয়ে নুর জাহান আকতার মনির সঙ্গে প্রেমঘটিত সম্পর্কের সূত্র ধরে রাউজান উপজেলার হলদিয়ার জানিপাথর এলাকায় এনামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। কলহের কারণ হলো এনামের পরকীয়া এবং দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাওয়া। স্ত্রী মনি পরকীয়া আপত্তি জানায় এবং দ্বিতীয় বিয়েতে অনুমতি দেয়নি। এজন্য তাকে গত ১ অক্টোবর নির্যাতন করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে স্বামী এনাম। তাদের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে এনাম ওমান চলে যায়। বিদেশ থাকতেই তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানায় দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতির বিষয়টি। কিন্তু কেউ তাতে সায় দেয়নি। এনাম ওমানে চলে যাওয়ার পর স্ত্রীকে কোন রকম ভরণ পোষণ না দেয়ায় এবং পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ভিকটিম তার বাবার বাড়িতে চলে যায় এবং গত ২ বছর সেখানে অবস্থান করে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এনাম ওমান থেকে তার বাড়ীতে চলে আসলে পরদিন ভিকটিম তার মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে আসে। ভিকটিম তার স্বামীর বাড়ীতে আসলে তার স্বামী তাকে পুনরায় নির্যাতন করে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এনাম ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতন করলে ভিকটিম জখমপ্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় তার বাবার বাড়ীতে চলে যায় এবং সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে স্বামীর বাড়ীতে ফিরে আসে। ০১ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক ২টায় ভিকটিমের দেবর মোঃ ইকরাম ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে জানায় যে, “তার মেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। সে যেন তাড়াতাড়ি তাদের বাড়ীতে আসে।”
সংবাদ পাওয়ার পর ভিকটিমের পিতা-মাতা কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনসহ দ্রুত ভিকটিমের শ্বশুর বাড়ীতে এসে ভিকটিমের মৃতদেহ বসতঘরের ভিতরের ফ্লোরে শাড়ি দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের পিতা স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারে, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তাদের গুদাম ঘরের ভিতরে ভিকটিম এবং তার স্বামী মোঃ এনামের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং এসময় ভিকটিমের আত্মচিৎকার শুনতে পায়। কিছুক্ষণ পর এনামকে একটি বস্তা কাঁধে নিয়ে উক্ত গুদাম ঘর হতে বের হয়ে যেতে দেখতে পায়। এর কিছুক্ষণ পর ভিকটিমের শ্বাশুড়ী ভিকটিমের ঘরে গিয়ে ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তিনি আশেপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করলে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে ভিকটিমের মাথায় পানি ঢালে। পানি ঢাললেও কোন অবস্থাতেই ভিকটিমের জ্ঞান না ফেরায় প্রতিবেশীরা বুঝতে পারে যে, সে মৃত্যুবরণ করেছে।
বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত ভিকটিমের লাশের রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। মনির লাশের ময়না তদন্ত এবং পুলিশ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রমানিত হয় যে, ভিকটিমকে তার স্বামী এনাম পাশবিক নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের রাউজান থানায় ঘাতক স্বামী এনাম’কে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, এনামকে র্যাব রাউজান থানায় হস্তান্তর করেছে। মামলায় একমাত্র আসামি এনাম হলেও নিহত গৃহবধুর ওপর নির্যাতনে আর কারো সম্পৃক্ততা পেলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।