ওয়াইডব্লিউসিএ চট্টগ্রামের আয়োজনে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) – টিআইবি চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র সহযোগিতায় “ভূমির অবক্ষয় ও মরুকরণ রোধে চাই কার্যকর অংশগ্রহণ” শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সনাক-টিআইবি চট্টগ্রাম এর ইন্টার্ন সদস্য মোঃ খাইরুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় এবং ওয়াইডব্লিউসিএ চট্টগ্রামের সহ-সাধারণ সম্পাদক সোনিয়া ডি কস্টা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে সনাক-টিআইবি চট্টগ্রাম এর সহ-সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু ও সদস্য রওশন আরা চৌধুরী।
পাশাপাশি অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: ইসমাইল হোসেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘ বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জীব-বৈচিত্র্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালে বাংলাদেশ পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ হলেও “পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫” – এ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও লেমিনেটেড প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ না হওয়ার ফলে “প্লাস্টিক দূষণ” অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সনাক-টিআইবি, চট্টগ্রাম এর নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চট্টগ্রামের কোর্ডিনেটর মনিরা পারভীন প্লাস্টিক এর ব্যবহার রোধ বিষয়ক ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন এবং একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জনের আহ্বান জানান। পাশাপাশি ইপসা, ঘাসফুল সহ অন্যন্য সংগঠনের প্রতিনিধিগণ পরিবেশ সংরক্ষণে নিজেদের সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
সনাক-টিআইবি, চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় বিশ্ব ব্যাংক প্রণীত একটি অ্যাকশন প্ল্যান নীতিগতভাবে গ্রহণের পাশাপাশি জেলা কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বর্জনের যে নির্দেশনা প্রদান করেছে, তা যেন শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানান।
একইসঙ্গে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় গৃহীত সকল কর্মকান্ডে সাধারণ জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অর্থবহ সচেতনতা ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ সার্বিকভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি, আইন ভঙ্গকারী এবং প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সনাক- টিআইবি জোর দাবি জানান।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৪ উপলক্ষে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধাচার নিশ্চিতে সনাক-টিআইবি চট্টগ্রাম পক্ষ হতে নিম্নোক্ত ১৯ দফা দাবী উপস্থাপন করেন—
১. তাপমাত্রা হ্রাস এবং খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধে সরকার প্রদত্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারসমূহের সময়াবদ্ধ ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২. পরিবেশ সুরক্ষায় এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-১৫ অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিতে অন্তর্ভুক্ত এবং তা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
৩. ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন ২০২৪Ñএর প্রেক্ষাপট অংশে পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য উৎপাদনে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার শব্দগুলোর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা উল্লেখ করতে হবে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ভূমি পুনরুদ্ধার, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ খরা মোকাবেলায় কৃষি ব্যবস্থাপনার জন্য টেকসই ভূমি ব্যবহার কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, জলাশয়, বনাঞ্চল, পাহাড় ও পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৬. অবৈধভাবে দখলকৃত বনভূমি ও নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. ২০৩০ সালের মধ্যে ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন নিউট্রালিটি বা ভূমির অবক্ষয় শূন্যে নামিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে পরিবেশ ও জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. বনভূমি, জলাভূমি ও কৃষি জমির অবক্ষয় রোধে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শিল্প কারখানা স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
১০. পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সেই সম্পদে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. জলবায়ু তহবিলের কার্যক্রমে খরা মোকাবেলা ও পানি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
১২. বন, নদী ও জলাভূমির দখল এবং এর শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে; ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন রোধে পরিবেশ আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন বন্ধ করতে হবে; ভূমি ও পানি দূষণ রোধে কৃষি ও মৎস্যচাষে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১৪. পলিথিনসহ শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. প্রয়োজনীয় জলবায়ু তহবিল প্রদানে উন্নত দেশগুলোকে বাধ্য করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে অধিপরামর্শ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
১৬. তাপমাত্রা হ্রাস, খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধে সরকারকে জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
১৭. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আদিবাসী, উপকূলীয় এবং খরা উপদ্রæত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলকে গুরুত্ব প্রদান করে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
১৮. বাস্তুতন্ত্র, ভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে উৎসাহিত করে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৯. পরিবেশ সংরক্ষণ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিতসহ স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
ওয়াইডব্লিউসিএ চট্টগ্রামের আয়োজনে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) – টিআইবি চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র সহযোগিতায় ওয়াইডব্লিউসিএ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে অতিথিরা বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।