ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়ন পরষিদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহীনের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ মুক্তির দাবিতে তার নিজ এলাকা ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন অব্যাহত রয়েছে। তাকে মুক্তির দাবিতে একসুরে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন পুরো এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা মামলায় এলাকার জনদরদী শাহীন চেয়ারম্যানকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এটি একটি বড় চক্রান্ত। তাকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এলাকায় আন্দোলন চলবে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. শেফায়াতুজ্জামান শাহীন বলেন, শাহীন একজন মানবিক জনপ্রতিনিধি। তিনি দলমতের উর্দ্ধে উঠে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। যে কোন দূর্যোগ ও মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে ছুটে গেছেন এবং অসহায়দের অকাতরে দান করেছেন। তার এই গ্রেপ্তার আমাদের ব্যতীত করেছে। এটি চরম অন্যায়।
ইসলামিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে শাহীন এলাকায় অভুতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। যা অতিত ইতিহাসে হয়নি। তিনি কোন হামলায় জড়িত নন। একটি মহল ষড়যন্ত্র করে তাঁকে গ্রেফতার করিয়েছেন। অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে, নইলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।
রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা এম হোসাইন বলেন, পুরো ইউনিয়নকে তিনি মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে গড়েছেন এক উজ্জ্বল অধ্যায়ে। গরীব মানুষের পাশে থেকে তিনি সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ অবদান, সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। এটিই তার জন্য কাল।
এদিকে, মামলার বাদি আদালতে আপোষ দেওয়ায় বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শাহ্ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি সুপারশি করে বলেন, চেয়ারম্যান একজন ভাল মানুষ। দীর্ঘকাল থেকে তিনি সংগঠন ও বিভিন্ন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে অকাতরে দান করেন। হেফাজতের বিভিন্ন প্রয়োজনেও হাত বাড়িয়েছেন। বাদি আপোষ দেওয়ার মাধ্যমে তার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মামলায় এজাহারভূক্ত বলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কে অপরাধী আর কে নিরাপরাধী সেটি দেখার এখতিয়ার বিজ্ঞ আদালতের। বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তির পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে, মামলার বাদী হেফাজতকর্মী মো. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শাহীনের নাম বাদ দিতে আদালতে আপোষ দিয়েছেন। বিষয়টিকে ইতিবাচক দেখছেন হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীও। কিন্তু আদালতের বিরুদ্ধে যাওয়ার এখতিয়ার কারো নেই। ফলে নিম্ন আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলে উচ্চ আদালতে নিস্পত্তি চাইবেন বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানের আইনজীবী এ কে করিম।
তিনি বলেন, গত ৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে চেয়ারম্যানের জামিন আবেদন করলে এডিশনাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম সরওয়ার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। ফলে পরবর্তিত ধার্য্য ২২ জানুয়ারি পূণরায় তার জামিনের আবেদন করা হবে। সেদিনও জামিন নাহলে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় হেফাজত অধ্যুষিত মাদ্রাসার ছাত্রহত্যা মামলায় গত ৮ জানুয়ারি ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহীনকে চট্টগ্রাম নগরী থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে বিক্ষিপ্তভাবে তাঁর মুক্তির দাবীতে আন্দোলন, বিক্ষোভ-সংগ্রাম ও মানববন্ধন অব্যাহত আছে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।