শীতকালীন সবজি হিসেবে বেশ পরিচিত টমেটো। আমাদের রান্নায় স্বাদ বাড়াতে কিংবা সবজি হিসেবে টমাটোর কদর বছরজুড়ে। তবে মৌসুম ছাড়া অন্য সময় টমাটো খুব একটা পাওয়া যায় না। আবার দামও বেশি থাকে। আর তাই শীতের পাশাপাশি গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমেও টমেটো চাষ নতুন সম্ভাবনা জাগাচ্ছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে বাজিমাত করছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির চাষীরা।
উপজেলার দাঁতমারা ইউপির অলিপুর গ্রামের সুবলছড়ি এলাকায় বসবাস করেন কৃষক মো. ইকবাল হোসেন। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো ৪০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সামার টমেটো (বারি-০৮) চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন তিনি। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় তিনি গত জুনের শুরুতে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩ হাজার ৫০০টি হাইব্রিড জাতের এই সামার টমেটোর চারা লাগিয়েছেন। তিনি চারাগুলো উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় রংপুর নাসিক নার্সারি থেকে সংগ্রহ করেন। চারা রোপনের ৪৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই গাছে ফুল ও ফল আসায় বেশ উৎফুল্ল কৃষক ইকবাল।
কৃষক ইকবাল জানান, ৪০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সামার টমেটোর চাষ করেছেন। এতে তিনি মালচিং পেপার ছাড়াও পোকামাকড় আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ৪০টি ইয়েলো ট্রেপ, ৪টি চেরানঙ, গাছের গঠন ঠিক রাখতে ৪০০০ হাজার(প্রায়) বাঁশের খুঁটি, রশি, সুতা, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে নেট মাচা ব্যবহার করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিত্যক্ত অনাবাদি উচু জমিতে সামার টমেটোর চাষ করা হয়েছে। মালচিং পেপার ব্যবহার করায় আগাছার অস্তিত্ব নেই বাগানে। ফলে টমেটো গাছগুলো বেশ পরিপক্ব হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রঙের টমেটো।
আলাপকালে কৃষক ইকবাল বলেন, গ্রীষ্মকালীন এই জাতের টমেটো চাষে খরচ একটু বেশি হয়। তবে এর চাহিদা ও বাজার মূল্য ভালো থাকায় ৪০ শতক জমি থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, অল্প সময়ে প্রতিটি গাছে ১ কেজির মত ফল হয়েছে। গাছ দিনদিন বড় হচ্ছে। প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৫ কেজি করে ফল আসার সম্ভবনা রয়েছে। অন্য কৃষকরা টমেটো চাষে এগিয়ে এলে দেশের টমেটোর চাহিদা মিটবে। আমদানি করতে না হলে দেশের টাকা দেশে থাকবে।
তিনি তার মতো করে অন্য কৃষকদেরও আহ্বান জানান এ পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ করতে। আর সেই ক্ষেত্রে তিনি কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন বলেও জানান।
এদিকে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটোর আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন উপজেলার আরও অকে কৃষক।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, কৃষকদের নিয়ে উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনে কৃষি অফিস নিয়মিত বিভিন্ন ট্রেনিং করে থাকে। কৃষক ইকবাল একজন বিচক্ষণ চাষী। অতিতে এখানে সবজি চাষ করে তেমন লাভবান হওয়া যেত না। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্রীষ্মকালীন সামার টমেটো চাষ করে এখানে বেশ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, জমিকে উত্তমরূপে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করে সেখানে বীজ বপন করতে হয়। তারপর সে বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মালচিং পেপার হলো বিশেষ ধরনের পলিপেপার (পলিথিন)। বীজগুলো থেকে চারা গজানোর পর চারার স্থানগুলো থেকে মালচিং পেপার ছিঁড়ে দিতে হয়। যাতে করে চারাগুলো মাথা তুলে বড় হতে পারে।
এই মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচের অতিরিক্ত পানি জমে জমি বিনষ্ট হয় না। অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে জমি চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় শ্রমিক কম লাগে। উৎপাদন খরচ কমে যায়। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলন অনেক বেশি হয়। গাছের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এতে করে কৃষক সবদিক থেকে লাভবান হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে সামার (বারি-০৮) টমেটো একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। এ জাতটি ফলনও ভালো দেয় এবং বাজারে এটির চাহিদা ও দাম দু’টি বেশি। যে জমিটিতে এ টমেটো চাষ করা হয়েছে জমিটি ছিল পতিত জমি। এ জমিটি এর আগে কয়েকজন লিজ নিলেও কেউ আলোর মুখ দেখেনি।
তিনি বলেনর, প্রথমবারের মতো এ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে বাজিমাত করেছেন স্থানীয় কৃষক ইকবাল। তাকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হয়েছে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।