চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে ১ বছরের ব্যবধানে ৪০ শতাংশ বিমান ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এ রুটে আসা যাওয়ার ভাড়া ১০ হাজার থেকে বেড়ে ঠেকেছে ১৮ হাজারে। ক্ষেত্রবিশেষ এ ভাড়া ছাড়িয়ে যায় ২৫ হাজারের ঘরও। ফ্লাইট সংকটের কারণে ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানায় বিমান সংস্থাগুলো। বাড়তি ভাড়া দিয়েও টিকেট পাচ্ছে না যাত্রীরা, এমন অভিযোগ ব্যবসায়ী ও নিয়মিত যাত্রীদের।
করোনা পূর্ববর্তী সময়ে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে মোট ৪টি বিমান সংস্থার ফ্লাইট প্রতি সপ্তাহে ২৪১৮ জন যাত্রী পরিবহন করলেও বর্তমানে চালু থাকা একমাত্র ফ্লাইট ইউএস বাংলা প্রতি সপ্তাহে পরিবহন করতে পারছে মাত্র ৫০৪ জন যাত্রী। ফ্লাইট সংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ প্রয়োজনীয় কাজে কলকাতা যেতে যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এই সংকট সমাধানে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বিমান সংস্থাগুলোর প্রতি ফের ফ্লাইট চালু করার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ফ্লাইট সংখ্যা কম থাকায় আমাদের বাধ্য হয়ে বেশি দামে টিকেট ক্রয় করতে হচ্ছে। এই রুটে পুনরায় সবগুলো বিমান চলাচল চালু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা, রিজেন্ট এয়ার এবং স্পাইস জেটের ফ্লাইট চলাচল করতো। রিজেন্ট এয়ারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে এক পর্যায়ে বাকি তিনটি বিমান সংস্থার ফ্লাইট চালু থাকে। করোনা শুরু হলে বাংলাদেশ বিমান, ইউ এস বাংলা ও স্পাইস জেট ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইউএস বাংলা ও স্পাইস জেট ফ্লাইট চালু করলেও গত বছরের অক্টোবর থেকে ভারতীয় বিমান সংস্থা স্পাইস জেট এ রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়। যার ফলে বর্তমানে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে ইউএস বাংলার দৈনিক একটি করে ফ্লাইট চলমান রয়েছে। যার মাধ্যমে সপ্তাহে মাত্র ৫০৪ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারেন।
বিমান সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে রিজেন্ট এয়ার স্পাইস জেট ৭৮ সিটের বিমানে সপ্তাহে ৭ দিনে ৫৪৬ জন যাত্রী পরিবহন করতো, রিজেন্ট এয়ার ১৬২ সিটের বিমানে সপ্তাহে ৭ দিনে ১১৩৪ জন যাত্রী পরিবহন করতো। বাংলাদেশ বিমান ৭৮ সিটের বিমানে সপ্তাহের তিন দিনে ২৩৪ জন যাত্রী পরিবহন করতো, ইউএস বাংলা প্রতি ফ্লাইটে ৭২ জন হিসেবে প্রতি সপ্তাহে ৫০৪ জন যাত্রী পরিবহন করে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য, চিকিৎসা এবং পর্যটক হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় প্রচুর লোক যাতায়াত করে। করোনা পরবর্তী কলকাতায় যাত্রী বাড়লেও কমেছে ফ্লাইট সংখ্যা। ফলে জরুরী প্রয়োজনে কলকাতায় যাওয়ার সহসা সুযোগ নেই। এই রুটে চলাচালকারী বিমানসংস্থাগুলোকে অচিরেই ফ্লাইট চালু করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তসলিম আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে এখন শুধুমাত্র ইউএস বাংলার ফ্লাইট চালু আছে। আশা করছি বাংলাদেশ বিমান এবং স্পাইস জেট এই রুটে শীঘ্রই পুনরায় ফ্লাইট চালু করবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেডের মার্কেটিং সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
স্পাইস জেট চট্টগ্রামের ইনচার্জ আসিফ চৌধুরী বলেন, “সেফটি সিকিউরিটির নিশ্চিতের জন্য এয়ারক্রাফটগুলো রি-চেক করা হচ্ছে। ফলে এয়ারক্রাফট শর্টেজ তৈরী হয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে স্পাইসজেটের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই আবারো এই রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে।”
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার মো: সলিমুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ভারতের কোন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের কোন ফ্লাইট নেই। চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের এই মুহুর্তে কোন পরিকল্পনা নেই।
সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড