বঙ্গবন্ধু টানেল দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা

বঙ্গবন্ধু টানেল—চট্টগ্রামবাসী তথা পুরো দেশেবাসীর জন্য এক নতুন মাইলফলক। এই টানেল চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে আনোয়ারা উপজেলাকে যুক্ত করেছে। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সাগর উপকূল ঘিরে শিল্পের নতুন দুয়ার খুলে যাচ্ছে। আর এই টানেল উদ্বোধনের পর থেকে আগ্রহের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। তাই তো প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন বঙ্গবন্ধু টানেল দেখতে। সেই সাথে যাতায়াতে সময় কম লাগায় পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগও হাতছাড়া করছেন না দর্শনার্থীরা।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনী কার্যক্রম শেষ করার পরই উচ্ছ্বাসিত মানুষ আসতে শুরু করে বঙ্গবন্ধু টানেল দেখতে। উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজার টানেলের প্রবেশ প্রান্তে শুক্রবার সকাল থেকে হাজারও মানুষ ভিড় করেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা ও রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বিভিন্ন যানবাহন যোগে পার হচ্ছেন মানুষ। অনেকেই যাচ্ছেন পারকি সমুদ্র সৈকতে।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাতরী চৌমুহনী বাজার থেকে টানেল সংযোগ সড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। টানেল দেখতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ছোট-বড় গাড়ি করে আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। টানেল দিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন পতেঙ্গা প্রান্ত। সড়কের পাশে অনেকে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে করছেন বেচা-বিক্রিও।

টানেলের প্রবেশ মুখে ভোজন বাড়ি রেস্তোরাঁর মালিক ইয়াছিন হিরো বলেন, টানেল খুলে দেওয়ায় সহজে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সারাদেশে থেকে লোকজন বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পারকি সৈকত দেখতে আসতে পেরেছে। মানুষের চাপটা আজকের বেশি। বেচা-বিক্রিও ভালো বেড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুদ বিন জাফর বলেন, উদ্বোধনের পর স্বপ্নের টানেলে ছুটছে আনোয়ারাসহ সারা দেশের বিভিন্ন যানবাহন। এই টানেল এখন জানান দিচ্ছে অপার সম্ভাবনার। টানেলকে কেন্দ্র করে দক্ষিণের দ্বার খ্যাত আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ জনপদে হচ্ছে আধুনিক সব বাণিজ্যিক উদ্যোগ। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের, সুযোগ তৈরি হবে আত্মকর্মসংস্থানের। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনপদের এ উপজেলায় নতুন প্রাণসঞ্চার এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। অর্থনৈতিক মুক্তির টানেলকে ঘিরে নতুন স্বপ্নে বিভোর এলাকাবাসী।

তিনি আরও বলেন, আনোয়ারা প্রান্তে আসা যেখানে তিনঘন্টার পথ ছিলো, এখন কয়েক মিনিটের মধ্যে চলে আসছি আমরা। বিমানবন্দর থেকে পুরো শহর ঘুরে বাড়ি যেতে হলে ঘণ্টা দেড়েক সময় বেশি লাগত। এখন এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে মাত্র ১০ মিনিটে টানেল পার হয়ে আনোয়ারা প্রান্ত। সত্যিই এ যেন স্বপ্নের টানেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এত সুন্দর টানেল উপহার দেওয়ার জন্য।

এদিকে শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে সকাল থেকে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে শত শত পর্যটক পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন সৈকতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য। পুরো সৈকত চরে পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে। অনেকেই সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন সৈকতের তীরে। সৈকতের আশপাশের হোটেল, মোটেলগুলো ভিড় করছেন পর্যটকরা।

পতেঙ্গা থেকে পারকি সমুদ্রে আসা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, দূরত্বের কারণে কখনও আসা হয়নি আনোয়ারা বা পারকি সমুদ্র সৈকতে। আজ বঙ্গবন্ধু টানেল দেখতে এসে দেখে নিলাম।

তবে পারকি সমুদ্র সৈকতে সন্ধ্যার পর আলোর ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের সন্ধ্যা নামার আগে গন্তব্যে ফিরে যেতে হয় এমনটায় জানিয়েছেন হোটেল সী ভিউ মালিক কাজী মো. জাফর আহমেদ।

পারকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, পারকি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সমুদ্র সৈকত ও বিনোদন কেন্দ্র। সৈকতের দৃশ্য যে কারও নজর কাড়বে। টানেল উদ্বোধনের প্রথম শুক্রবার আজকে। অন্যান্যদের দিনের চেয়ে আজকে পর্যটকের সংখ্যাটা দ্বিগুণ। আনোয়ারা প্রান্তের পর্যটকসহ নতুন যোগ হয়েছে পতেঙ্গা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের পর্যটকের। বঙ্গবন্ধু টানেলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে আরও সহজ।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বঙ্গবন্ধু টানেল দেখতে দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে। টানেলের ভেতরে নিরাপত্তা এখনও থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেনি। তারপরও টানেলের বাইরে দর্শনার্থীর নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।