সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে জলদস্যূরা আগের মতো জেলেদের ওপর নির্যাতন করে মাছ ধরার বোট ছিনতাই করে সেই বোট দিয়ে আবার দস্যূতা করার ঘটনা ঘটে। এমন অভিযোগ পেয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জলদস্যূদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। অবশেষে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে উপকূলে অভিযান চালিয়ে ৩০ জলদস্যূকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) থেকে পরদিন সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ভোর পর্যন্ত টানা অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি ট্রলার এবং ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরাঞ্জম জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার দস্যূরা হলেন—চট্টগ্রামের আনোয়ারা দক্ষিণপাড়ার করিম (৩৩), গহিরার মো. খলিলুর রহমান, মো. ইকবাল হোসেন (২৪), মো. শাহেদ (২২), মো. হোসেন (২৭), মো. জফুর (৩৫), শফি আলম (৪০), আ. রহিম (২৫), মো. শওকত (৩৭), মোঃ ইসমাইল (২৬), মো. হারুন (৪৪), মো. ইয়াছিন (২৯), মো. কাছেদ (১৯), মো. আকিদ খান (৩৭), মো. আলী হোসেন (২৪), আব্দুল মান্নান (৪০), মো. সোলায়মান (৩৮), নুর মোহাম্মদ (১৭), আব্দুর রহিম সিকদার (৩৪), মো. মফিজুর রহমান (৩০), ফজল হক (৪০)।
ভোলা জেলার দস্যূরা হলেন—চরফ্যাশনের মো. শামীম (২১), মো. ইউসুফ (২৯), শাজাহান বেগম (৩৭), মোঃ সাহাব উদ্দিন (৩৫)। কক্সবাজারের দস্যূরা হলেন—কুতুবদিয়ার দেলোয়ার ইসলাম (৪২), মো. দিদারুল ইসলাম (৩৩), মো.রুবেল (৩৩), মো. নাইম (১৯), মহেশখালীর মো. গিয়াস উদ্দিন (২৬)।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর ঘাটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানান র্যাব-৭এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মাহবুব আলম।
তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা এবং বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যু বাহিনীদের আক্রমণে সাগরে জেলেদের উপর অমানবিক অত্যাচার, জুলুম, চাঁদাবাজি, অপহরণ, প্রাণ নাশের হুমকি সহ হত্যার মত জঘন্য ঘটনাও ঘটছে। এসব ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের দাপটে তটস্থ জেলেরা।
তিনি বলেন, র্যাবের উপর্যপুরি অভিযানের এক পর্যায়ে সশস্ত্র জলদস্যুরা গত ২০১৮ এবং ২০২২ সালে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাদের তথাকথিত গডফাদাররা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়। আত্মসমর্পণের পর সাগরে ডাকাতি কিছুদিন বন্ধ থাকলেও তথাকথিত গডফাদাররা নতুন ডাকাত সদস্য রিক্রুট করে পুনরায় জলদস্যু গ্রুপ তৈরী করে। উক্ত তথাকথিত গডফাদারের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন-শৃংখলা বাহিনীর চোঁখ ফাকি দিয়ে নিজেদের ট্রলার নিয়ে অন্য যেকোনো কোম্পানির বোট ডাকাতি করে মাঝিমাল্লাদের বেধড়ক পিটিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নামিয়ে দিয়ে জলদস্যুরা লুটকৃত কোম্পানির বোট দিয়ে ডাকাতি চালিয়ে যায় জলদস্যূরা। যাতে তথাকথিত গডফাদারদের কেউ চিহ্নিত করতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা ও বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যু বাহিনী কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর সম্প্রতি তারা আবারও পূর্বের ন্যায় সাগরে জেলেদের ওপর অত্যাচার, জুলুম, চাঁদাবাজি এবং অপহরণসহ সকল প্রকার অন্যায় কাজ পরিচালনা করছে। ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগের বিষয়টি র্যাব-৭ মানবিকতার সহিত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে উল্লেখিত এলাকায় ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।
এরই প্রেক্ষিতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের স্থল ও সাগর পথে র্যাব-৭এর আভিযানিক দল দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনা করে। এতে বেশ কয়েকজন দস্যূ সর্দারসহ ৩০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আমরা তাদের গডফাদারদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখছি।
লে. কর্ণেল মো. মাহবুব আলম আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পুরো এক-দুই সপ্তাহ বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি করে দাপিয়ে বেড়ায়। গডফাদারদের কাজ হলো অস্ত্র, গুলি এবং ট্রলারের যোগান দেয়া। বিভিন্ন নৌ-লঞ্চ-স্টীমার ঘাটে সোর্সের মাধ্যমে আইন শৃংখলা বাহিনী সাগরে অভিযানে যাচ্ছে কিনা তা তদারকি করে জলদস্যুরা উপকূলে আসার সময় তা অবগত করাসহ বোট মালিক এবং মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে ডাকাতির মাছ ও মালামাল বিক্রি করে।
এছাড়াও জলদস্যুরা সাগরে গিয়ে ডাকাতি করে মাছ এবং মালামাল বিক্রয়ের টাকা ৪০% কথিত গডফাদারের, ২০% তেল খরচ এবং বাকী ৪০% ডাকাতি সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত সদস্যদের মাঝে বন্টন করতো। তাদের সিডিএমএস পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিষয়োক্ত অপরাধের কারনে তাদের প্রত্যেকের নামে অসংখ্য মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি এবং উদ্ধারকৃত আগ্নেআস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সরঞ্জামাদি পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম চলছে বলে জানায় র্যাব।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।