‘বর্ণে বর্ণালী, সাফল্যে ত্রিশ’

চবিতে মার্কেটিং ডে উদযাপিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মার্কেটিং বিভাগ। জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি বিভাগটি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে সমাদৃত। বিভাগটির কোন আয়োজন মানেই উল্লাস আর উচ্ছ্বাস। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ত্রিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে ‘মার্কেটিং ডে’ পালন করেছে বিভাগটি। যেখানে বিভাগটির শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সমাগম হয়েছিলো বেশ কয়েকজন সাবেক শিক্ষকেরও।

মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) হেমন্তের সকালে ছিলো খানিকটা কুয়াশার ছায়া। তবে রোদের প্রখরতা বাড়ার সাথে সাথে কেটে যায় আবছা ধোঁয়াশা। ধীরে ধীরে বিভাগটির করিডোরে জড়ো হতে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর খানিকটা পরে অতিথিদের সাথে হরেক রকমের ব্যানার ফ্যাষ্টুন নিয়ে শুরু হয় র‌্যালি। মুহূর্তে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক।

‘বর্ণে বর্ণালী, সাফল্যে ত্রিশ’ 1

র‌্যালির পর চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ অডিটোরিয়ামে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই পর্বে বিভাগটির শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে কেক কেটে উদযাপন করা হয় চবির মার্কেটিং বিভাগের ত্রিশ বছর। এর পরে বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুনাজ্জিনা সুলতানার সভাপতিত্বে এবং বিভাগটির শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. জাবেদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সম্মাননা স্বারক অনুষ্ঠান।

এই পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে এবং ব্যাবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. তৈয়ব চৌধুরী।

‘বর্ণে বর্ণালী, সাফল্যে ত্রিশ’ 2

চবির মার্কেটিং বিভাগের ত্রিশ বছর পূর্তির শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো এগিয়ে যাওয়া। এজন্য আমাদেরকে যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। দেশটি নির্মাণ করতে আমাদের প্রচুর রক্ত দিতে হয়েছে। এই দেশকে গড়তে হলে পরিশ্রমী হতে হবে। আমাদেরকে শুধু নিজের কথা ভাবলে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদেরকে পুরো দেশ ও জাতি সম্পর্কে ভাবতে হবে। আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে পুরো জাতি।

ড. শিরীণ বলেন, বহুবার হায়নার আক্রমণের শিকার হয়েছে আমাদের দেশ। একবার আমরা মুক্ত হই আবার কেউ অন্ধকার নিয়ে ঘিরে ধরে। তবে আজকে আমরা স্বাধীন। আমাদের পড়াশোনা করে মানবিক মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। নিজের পাশাপাশি অন্যরে বিষয়েও ভাবতে হবে ।

তিনি আরও বলেন, এখানে যারা শিক্ষার্থী আছেন তারা মেধার লড়াইয়ে টিকে থেকেই ভর্তি হতে পেরেছেন। আপনাদের উচিত সেই মেধাকে অক্ষুন্ন রাখা। নিজেকে উচ্চ আসনে আসীন করা। সরকার সবাইকে চাকুরি দিতে পারবেনা । তাই যার যার চাকরি তাকেই খুজে নিতে হবে। তরুণরা যদি নিজের অবস্থান তৈরি করতে না পারে তবে দেশ আগাবে না।

‘বর্ণে বর্ণালী, সাফল্যে ত্রিশ’ 3

বক্তব্যে পর্বের শেষে বিভাগটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে বর্তমান সভাপতি পর্যন্ত সকলকে সন্মাননা প্রদান করা হয়। এসময় যারা উপস্থিত হতে পারেনি তাদের স্বজনরা উপহার গ্রহণ করেন। সেইসাথে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় তাদের অবদানের কথা।

দিনব্যিাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ‘Post-Pandemic Marketing: Challenges and Opportunities’ শীর্ষক সেমিনারে বিভাগটির বর্ষীয়ান অধ্যাপক এস. এম. সালামত উল্লাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বনামখ্যাত অন্ট্রাপ্রিনাউরিয়াল মার্কেটিং প্র্যাক্টিশনার ও প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আসিফ ইকবাল। পরে প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ মামুন, অধ্যাপক ড. মো. সালেহ জহুর, অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন, মাহমুদুল হক তাজ এবং মো. মামুন চৌধূরী।

‘বর্ণে বর্ণালী, সাফল্যে ত্রিশ’ 4

র‌্যালি ,আলোচনা সভা, সেমিনার —এতেই শেষ নয় বিভাগটির আয়োজন। বিকেলে শুরু হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যা নজর কেড়েছে সকলের। কারও পরনে শাড়ি,কেউবা পরেছেন পাঞ্জাবি পায়জামা। শাড়ির সাথে মিশে একাকার খোপায় বাঁধা বেলী। পায়জামা পাঞ্জাবিতে কেউবা আবার শোভিত হিমুময় ভাবে। তাদের কেউ গাইছেন, কেউবা আবার হাত-পা দুলিয়ে মগ্ন নৃত্তে। ছিলো অভিনয় ও আবৃত্তিও। বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক পর্বের এই আয়োজন সত্যি ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। আর তার প্রমাণ মিলে পেছনে থাকা দর্শক-স্রোতাদের উৎসাহ উদ্দপিনা দেখে।

দিনব্যপী এই আয়োজনে বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষিকারাসহ বশে কয়েক‘শ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। পরে সাংস্কৃতিক পর্বের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই আয়োজন।

‘বর্ণে বর্ণালী, সাফল্যে ত্রিশ’ 5

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।