সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বভাবজাত। খাবারে যদি সৌন্দর্যের উপস্থিতি থাকে তা আরো তৃপ্তি এনে দেয়৷ সাজসজ্জার উপস্থিতি উপহারগুলোকে করে আরও আকর্ষণীয়। বাঙালির ঐহিত্যবাহী খাবারগুলোতে আধুনিকতা আর শৈল্পিকতা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে চালু হলো ওয়েল ফুডের—ওয়েল স্টুডিও।
চট্টগ্রাম নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে হল টোয়েন্টিফোরের নিচ তলায় চালু হয়েছে ওয়েল স্টুডিও। যেখানে রয়েছে বাহারি মিষ্টান্ন। কেউ চাইলে নিজের পছন্দ মতো সাজিয়ে নিতে পারবেন ‘ডালা’। প্রত্যেকটি ‘ডালা’ ভরা থাকবে ভিন্ন স্বাদ ও ফ্লেভারের মিষ্টান্ন। গ্রাহকদের পছন্দ মতো সব ধরণের খবার নিয়ে সাজানো হয় এটি।
ওয়েল স্টুডিও বাঙালির ঐতিহ্য ধারণ করে আধুনিক সাজে গ্রাহকদের ইউনিক সব প্রডোক্টের যোগান দিচ্ছে এমনটা উল্লেখ করে ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ আসিফ হাসান চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, পিঠাপুলি, রসমালাই, রসগোল্লা, সন্দেশ—এসব আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এগুলো আমাদের আতিথেয়তার মাধ্যম। তবে সম্প্রতি বাজারে ওয়েস্টার্নের দাপটে আমরা পেস্টি, মুস—এসবের দিকে সরে এসেছি। আমরা ওয়েল স্টুডিওতে এক দিকে যেমন আমাদের সংস্কৃতি ধরে রেখেছি অপর দিকে নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে আধুনিকতার ছোঁয়াও দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মুস রয়েছে যেটি মূলত সন্দেশ দিয়ে তৈরি। তবে চাপের মধ্যে ডিম, চকলেট দিয়ে এটিকে ওয়েস্টার্ন ডিজাইনে ইউনিক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আপনি যেমন আধুনিক খাবারের ছোঁয়া পাচ্ছেন তেমনি আমাদের ঐতিহ্যগত খাবারেরও স্বাদ বজায় থাকছে। আমরা চেষ্টা করি গ্রাহকদের চোখের তৃপ্তি, মনের তৃপ্তির সাথে খাবারে বাঙালিয়ানা ধরে রাখতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলোয় ঝলমলে নির্মল পরিবেশে মিষ্টিজাত পণ্যে সেজেছে ওয়েল স্টুডিও। এ যেন হরেক রকমের প্রিমিয়াম খাবারের মেলা। নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তৈরি এসব পণ্য কিনতে দোকানে ভিড় করছেন মানুষজন। বিশেষ করে উপহারসামগ্রী হিসেবে বেছে নিচ্ছেন গ্রাহকরা।
কাস্টমাইজড প্যাকেজিং ডিজাইনসহ পণ্য সরবরাহ করছে ওয়েল স্টুডিও:
প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে কাস্টমাইজড ডিজাইনসহ পণ্য সরবরাহ করে থাকে। এর ফলে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে— বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, স্নেহভাজন, শ্রদ্ধেয়জন বা প্রিয়জনকে একটি সুন্দর অবয়বে খাবার উপহার দেওয়ার। কেউ চাইলে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ডিজাইনগুলো পছন্দ করতে পারবে আবার কেউ চাইলে নিজের পছন্দ মতো পণ্য সাজিয়ে নিতে পারবে। এই সুবিধার জন্য গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন ওয়েল স্টুডিওতে।
যেসব পণ্য শোভা পাচ্ছে ওয়েল স্টুডিওতে:
প্রতিষ্ঠানটিতে কেক, সন্দেশ, চকলেট ও দই জাতীয় বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু হলো— চকলেট মুস, ভ্যানিলা মুস, চকলেট বল, চকলেট সন্দেশ, মালাই কেসার নাট, আবার খাবো, নয়নতারা, চকলেট ডিলাইট, আমেজ, গন্ধরাজ সন্দেশ, আম সন্দেশ মুস, প্রাণ ভোগ, স্ট্রবেরি কাপ কেক, ভ্যানিলা কাপ কেক, ডবল চকলেট কাপ কেক, মোকা কাপ কেক, চকলেট কুকিজ কাপ কেক, রেইনবো মুস, ভ্যানিলা সন্দেশ কেক, চকলেট সন্দেশ কেক, আম কেক, চকলেট চিপস কেক, মিক্স ফ্রুট কেক, হোয়াইট চকলেট, পেস্তা কেক, মোকা পেস্টি, ব্লুবেরি দই, কমলা ভোগসহ হরেক রকমের মিষ্টান্ন। এছাড়া পাউরুটি, লাড্ডুসহ আছে নানান জাতের মিষ্টিজাতীয় খাবার।
যা বলছেন গ্রাহকরা:
কামরুন নাহার, একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরি করেন। বসের জন্মদিনে গিফট কেনার জন্যে এসেছেন ওয়েল স্টুডিওতে। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির খাবারের স্বাদ যেমন ভালো তেমনি পণ্যের ডিজাইনেও রয়েছে নান্দনিকতা।
কামরুন নাহারের মতো মাহফুজও এসেছেন ওয়েল স্টুডিওতে। পড়েন একটি নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রিয়জনকে সারপ্রাইজ গিফট দিতে ওয়েল স্টুডিওকে বেছে নিয়েছেন । হরেক রকমের ডেজার্ট খাবার অর্ডার করেছেন ওয়েল স্টুডিওতে। খাবারের সাথে নিজের পছন্দ মতো কাভারে তৈরি করেছেন ‘আইকেচি’ গিফট বক্স।
কামরুন নাহার মাহফুজদের মতো গ্রাহকদের আনাগোনায় নিত্য ভরে উঠে স্টুডিওটি। যাদের কেউ আসেন বন্ধুদের সাথে বিশেষ কোন দিন উদযাপন করতে। আবার অফিসের ব্যস্ততা শেষে কারো বাবা ছুটে আসেন সন্তানের জন্মদিনের জন্য সুন্দর কেক নিয়ে যেতে। ইউনিক সব প্রোডাক্টের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সকলের পছন্দ ও আস্থার জায়গা বলে মনে করছেন গ্রাহকরা। আর এভাবে ওয়েল স্টুডিওর সেবা অব্যাহত থাক সেই প্রত্যাশা তাদের।
জীবনের ছোট ছোট মূহুর্তগুলোকে আরো অর্থবহ করতেই ওয়েল স্টুডিওর এমন আয়োজন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্র্যান্ড ম্যানেজার ব্রেন্ট অন্ড্রে রিচার্ডসন। তিনি বলেন, আমরা সব সময় চাই খাবারগুলোতে স্বকীয়তা বজায় রাখতে। আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত ও গুণগত মান অটুট রেখে আমরা পণ্যগুলো তৈরি করি৷ প্রোডাক্টের পাশাপাশি আমরা প্যাকেজিংয়েও বিশেষ নজর দিয়েছি। এটি আমাদের কাস্টমাইজড প্যাকেজিং ডিজাইন। যাতে গ্রাহক নিজের পছন্দের মানুষকে গিফট করতে পারেন, ওয়েল প্রেজেন্ট হয়।
ওয়েল গ্রুপের অপারেশন এন্ড ব্র্যান্ড ম্যানেজার মো. আশিক উল্লাহ চৌধুরী বলেন- মানুষের মুখে হাসি ফোটানোকে আমরা খুবই প্রাধান্য দেই। আর তাই চেষ্টা করি খাবারগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করতে। তাই মানুষজনও আমাদের ভালোবাসে। কেউ খাবার গিফট করতে চাইলে ছুটে আসেন ওয়েল স্টুডিওতে। আর এতেই আমাদের প্রশান্তি।
আরও পড়ুন:
কাবাব প্রেমিদের জন্য ইউনিক ও রসালো স্বাদ নিয়ে এলো তানুর কাবাব
দুই দশকে গ্রাহকের আস্থায় ওয়েল ফুড, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।