বাজার নিয়ন্ত্রণে ‘প্রতিযোগিতা আইন’ প্রয়োগ জরুরি
আমাদের দেশে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশচুম্বী। বাজারে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে একচেটিয়া কারবারের মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম অনেক বাড়িয়ে ফেলে। তবে এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে ২০১২ সালে প্রণিত প্রতিযোগিতা আইন। যদিও এর যথার্থ প্রয়োগ না থাকায় দেশের কোনায় কোনায় গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। বর্তমান নতুন সরকারের সময় যখন সংস্কারের কথা বেশি আসছে তখন বাজার সংস্কারে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে এই ‘প্রতিযোগিতা আইন’।
বাজারের স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন পাস করা হয়। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজারে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি একচেটিয়া কারবার এবং মূল কারসাজি দূর করা। প্রতিযোগিতা আইনের উদ্দেশ্য লাভের জন্য ২০১৬ সালে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়। উক্ত আইনের ৫ ধারা মোতাবেক কমিশন গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা এবং উক্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে স্থিতিশীল ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতা আইন অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে দেশের স্বাভাবিক বাজারকে আরও স্থিতিশীল করার জন্য। প্রতিযোগিতা আইনের যথাযথ প্রয়োগের ফলে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আরো উদ্ভাবনী এবং দক্ষ হয়ে উঠবে।
বাজারে যদি একচেটিয়া কারবার থাকে তাহলে ভোক্তাদের বিকল্প থাকে না। প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের ফলে বাজারে বিকল্প থাকবে। এতে পণ্য ও সেবার মান আরো উন্নত হবে। আমাদের দেশে বর্তমানে বড় পুঁজিধারি ব্যবসায়ীদের জন্য মধ্য ও ছোট ব্যবসায়ীরা অনেকটা কোনঠাসা হয়ে যায়। বাজারে প্রতিযোগিতা আইন প্রয়োগের ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে এবং তারা বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে সমানভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
এছাড়াও প্রতিযোগিতা আইন বাজার ব্যবস্হা স্থিতিশীল করার পাশাপাশি অসাধু চক্র সৃষ্টি করা একচেটিয়া কারবার নিরসন করে। এই আইনের সঠিক ব্যবহার করে বর্তমান সময়ে বৃদ্ধি পাওয়া দ্রব্যমূল্য কমাতে পারি এবং পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি করতে পারি। বাজার বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, প্রতিযোগিতা আইন পুরোপুরি প্রয়োগের ফলে মোট দেশজ উৎপাদন ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
এত উপকার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতা আইন এখনো ভালভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো এই আইনের সচেতনতার অভাব। অনেক ব্যবসায়ী ও গ্রাহক এই আইন সম্পর্কে সচেতন নয়। আবার অনেক সময় আইন থাকলেও দেখা যায় এর প্রয়োগ নেই।
এছাড়া আমাদের দেশের অধিকাংশ বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক রাজনীতিবিদরা তারাও চান না যে এই আইন বাজারে বাস্তবায়িত হোক। কারণ এই আইনের কঠোর প্রয়োগ হলে তারা অসাধু কার্যক্রম চালাতে পারবেন না।
আবার ২০১৬ সালে কমিশন গঠন করা হলেও এখনো যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ করতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত উক্ত আইনের অধীনে বাজার পর্যবেক্ষক দল তৈরি হয়নি। এটা তাদের ব্যর্থতা। প্রতিযোগিতা আইনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে এই আইনের অন্তরায়গুলো দূর করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করা, আইন প্রয়োগের ক্ষমতা জোরদার করা এবং কমিশনের কাঠামো শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
সর্বোপরি নতুন সরকারের কাছে এই আবেদন, উক্ত আইনটি অতি দ্রুত ভালোভাবে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। বাজারে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে প্রতিযোগিতা আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক: আইন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।