বাফুফের জাতীয় রেফারি হলেন লংগদুর সন্তান চবির তারিকুল

পাবর্ত্যাঞ্চলের পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চল লংগদুতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা তারিকুল ইসলাম বাবলুর। খেলাধুলার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। সেই আগ্রহ বিকশিত হওয়ার সুযোগ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তির পর থেকে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) জাতীয় রেফারি। তারিকুল ইসলাম এর আগে বাফুফের ক্যাটাগরি-২ শ্রেণির রেফারি ছিলেন। তার এই অর্জনে প্রসংশায় ভাসাচ্ছেন বন্ধু-সহপাঠী সুহৃদরা।

জানা গেছে, তরুণ এই ফুটবল প্রেমী রেফারি তারিকুল ইসলাম চবির ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সাইন্স ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি ক্যাটাগরি-২ শ্রেণির রেফারি থাকা অবস্থাতেই বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য ম্যাচ পরিচালনা করার মাধ্যমে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল টুর্নামেন্টেও ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে তার। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ৫টি, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন লিগের (বিসিএল) ১০টি ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করেছেন বলে জানা গেছে।

খেলা পরিচালনায় তার দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পাশাপাশি শারীরিক ফিটনেস এবং লিখিত পরীক্ষায় সফলতার মাধ্যমেই জাতীয় পর্যায়ের রেফারি হওয়ার চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, বাফুফে ও রেফারিজ কমিটির পরিচালনায় গত ফেব্রুয়ারিতে ফিটনেস টেস্ট এবং ১৫ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়ে ক্যাটাগরি-২ থেকে ক্যাটাগরি-১ রেফারিতে উন্নীত হয়েছেন ৬ জন। তারিকুল ইসলাম তাদের মধ্যে একজন।

তারিকুল ইসলাম বাবলু বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে বাবলু সরকার নামেই সুপরিচিত। বাবলু শুধু ফুটবলে পারদর্শী না, ক্রিকেটেও অলরাউন্ডার। ২০১৩ সালে লংগদু উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তাদের ক্রিকেট টিম জেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জনের রেকর্ড আছে তার। ক্রিকেট আর ফুটবলেই সীমাবদ্ধ নয় বাবলু, তিনি একজন দক্ষ সাঁতারু, অ্যাথলেট হিসেবে ১০ হাজার এবং ৫ হাজার মিটার দৌড়ে ইতোমধ্যে তার ঝুলিতে জমা আছে অনেক মেডেল। ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলাতেও রয়েছে তার বিশদ অর্জন। তবে ফুটবলটাই তার এখন ধ্যানজ্ঞান বলে জানান বাবলু।

তিনি ২০১৩ সালে রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে রাবেতা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশ এন্ড স্পর্টস সাইন্স বিভাগে একই বছরে ভর্তি হন বাবলু। এরপর থেকেই পড়ালেখা আর খেলাধুলা চলতে থাকে সমান তালে।

সেখান থেকেই ক্রমান্বয়ে রেফারিংকে পেশা হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে পেশাদার রেফারিংয়ের শুরু। ধারাবাহিক সাফল্যের মাধ্যমে এখন তিনি জাতীয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-১ রেফারি হওয়ার মর্যাদা অর্জন করলেন।

খেলাধুলা সম্পর্কে বাবুলর অভিমত, ‘খেলাধুলা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, স্বাবলম্বী করেছে, সম্মানও দিয়েছে।’

বাবলু সরকারের বাবা আব্দুল বারেক সরকার একজন জনপ্রতিনিধি। তিনি লংগদু উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। আর মা বানেছা খাতুন গৃহিণী। সাত ভাই-বোনের মধ্যে বাবলু পঞ্চম।

১৯৯৭ সালে ১০ নভেম্বর লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ ইউনিয়নের পশ্চিম জারুল বাগান এলাকায় জন্ম নেয়া বাবলু পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলায় পারদর্শিতা দিয়ে যেমন নিজের সম্মান অর্জন করেছেন, তেমনি নিজের জেলা রাঙামাটি ও উপজেলা লংগদুর নামও উজ্জ্বল করেছেন।

জানতে চাইলে তারিকুল ইসলাম আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বাছাই করা ক্যাটাগরি-২ শ্রেণির ১৫ জন রেফারি ক্যাটাগরি-১ উন্নীত হওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৬ জন। তাদের একজন হতে পারাটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তবে আমি এখানেই থামতে চাই না। পরবর্তী লক্ষ্য ফিফার আন্তর্জাতিক রেফারিতে উন্নীত হওয়া। শারীরিক ফিটনেস ধরে রেখে আন্তর্জাতিক রেফারি হওয়া অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। তারপরও আমি আশাবাদী, আমি সেটা পারবো, ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।