বার্ধক্যের কাছে হার মানলো দেশের প্রাণী জগতের প্রথম পাত্রী নোভা

বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় চির বিদায় নিলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহী নোভা। পা প্যারালাইজড, কিডনি ও যকৃতের জটিলতা, এক চোখ ছানিতে নষ্ট যাওয়াসহ নানা রোগে ভুগছিল নোভা। তার জীবনের শেষ দিনগুলো তাকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভসহ অন্যরা।
অবশেষে শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় নিস্তেজ হয়ে যায় মহা ধুমধামে বিয়ের পিঁড়িতে বসা নোভা। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে দর্শনার্থীদের বিনোদন দিয়ে আসা নোভার। নোভার বর নভো’ও চলে গিয়েছিল গত বছর।

ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, সিংহ দম্পতি রাজ-লক্ষ্মীর ঘরে ২০০৫ সালের ১৬ জুন বর্ষা ও নোভার জন্ম হয়। সিংহের স্বাভাবিক জীবনকাল সাধারণত ১৫ থেকে ১৭ বছর। নোভা মারা গেলো ১৮ বছর ৪ মাস বয়সে।
২০০৫ সালে নোভা ও বর্ষার জন্মের কিছুদিন পর ‘বাবা’ রাজ মারা যায়। এর তিন বছর পর ২০০৮ সালে মারা যায় ‘মা’ লক্ষ্মীও।
প্রায় ১১ বছর নিঃসঙ্গ থাকার পর নোভার জন্য ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রাণী বিনিময় প্রক্রিয়ায় রংপুর চিড়িয়াখানায় বর্ষাকে পাঠিয়ে সেখান থেকে আনা হয় সিংহ ‘বাদশাহ’কে। বাদশাহর বয়স তখন ১৩ বছর। চট্টগ্রামে আসার পর বাদশাহর নাম নোভার নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয় ‘নভো’। ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে ১৯ বছর বয়সে নভো বার্ধক্যের কারণে মারা গেলে নোভা আবারও নিঃসঙ্গ হয়ে যায়।

চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ আরও বলেন, প্রকৃতির নিয়মে নোভা মারা গেলো, ময়নাতদন্ত করা হবে। মাটিচাপা দেওয়ার আগে চামড়াটা সংরক্ষণ করা হবে। ভবিষ্যতে চিড়িয়াখানায় জাদুঘর হলে সেখানে নোভার চামড়াটা রাখা হবে। দর্শনার্থীরা নোভার ইতিহাসটা জানতে পারবেন।

বার্ধক্যের কাছে হার মানলো দেশের প্রাণী জগতের প্রথম পাত্রী নোভা 1
২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছিল

নোভাকে নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. শুভ সম্প্রতি ফেসবুকে লিখেছেন, চাকরির শুরু থেকে সব সময় চাইতেন নোভার সঙ্গে ছবি তুলতে। এখন বার্ধক্যের কারণে নোভার বিভিন্ন অঙ্গ কাজ করছে না। এখন গায়ে হাত দেওয়া যাচ্ছে, কাছে যাওয়া যাচ্ছে। এ রকমভাবে কাছে আসতে চাইনি…আশা করি হঠাৎ অহংবোধে লাগবে আর আমাকে দৌড়ানি দেবে। আমি কোনো রকমে খাঁচা থেকে পালাব। আর আগের মতো ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকাবে…আহারে বার্ধক্য!’
না, ডা. শুভকে আর ভয় পেতে হবে না। খাঁচায় বন্দি জীবনে যে নোভার জন্ম তার জীবনাবসান ঘটেছে সেই খাঁচাতেই। দেড় যুগ নোভা দর্শনার্থীদের বিনোদন দিয়েছে। দুর্নীতি আর ফান্ড লুটপাটে যখন চিড়িয়াখানার কোনো শ্রী ছিল না তখন ছিল এই নোভা। নোভার সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রাণী প্রেমিদের রয়েছে অসংখ স্মৃতি। শুধু নোভাকে দেখতেও একটা সময় মানুষ চিড়িয়াখানায় যেতো। বিদায় নোভা…

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।