বিএসবি ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা পেলো ৪ হাজার কৃতি শিক্ষার্থী

কারও স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কেউবা আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে; কারও ইচ্ছে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসক হওয়ার; কেউবা স্বপ্ন দেখছেন প্রকৌশলী হতে। কিন্তু দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন হতে গুনা কয়েকজনের। অজ্ঞতা কিংবা সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার আগ্রহ কম শিক্ষার্থীদের। তবে বিএসবি ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পাল্টে দিয়েছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মানসিকতা ও চিন্তধারা। এখন অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে গিয়ে আরও দক্ষতা অর্জন করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে।

বিগত বছরগুলোর মতো এবারও দেশব্যাপী এসএসসি কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএসবি ফাউন্ডেশন। শনিবার (৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগরীর বড়পুলস্থ সিটি হল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। আর সেখানে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের মানসিকতার এমন পরিবর্তনের কথা জানান।

জানা গেছে, বিজ্ঞান শাখা থেকে জিপিএ ৪ এর উপরে এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে জিপিএ ৩.২৫ এর বেশি প্রাপ্তরা এই সংবর্ধরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। চট্টগ্রামের প্রায় ৮ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী এই সংবর্ধনার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও সেখান থেকে ৪ হাজার শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ছাত্রীদের এবং দুপুর আড়াইটা থেকে ছাত্রদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

সরজমিনে দেখা গেছে, আগের দুই দিনের মতো শনিবারও চট্টগ্রামে ঝরছিলো অঝোর বর্ষা। সকাল থেকে বৃষ্টিতে চারদিক পানি আর পানি। তবে বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে বিএসবি ফাউন্ডেশনের এসএসসি কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ছুটে আসেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সদ্য মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুনো শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে যায় সিটি হল কনভেনশন সেন্টার।

বিএসবি ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা পেলো ৪ হাজার কৃতি শিক্ষার্থী 1

অনুষ্ঠানের শুরু থেকে বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার শিক্ষার্থী অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক তথ্যবহুল আলোচনা করেন। সেই সাথে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। পুরো আয়োজন যেমন ছিলো উৎসবমুখর তেমনি শিক্ষামূলক। আয়োজনের মাঝে মাঝে ছিলো বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন। দেশের শিক্ষাব্যাবস্থা, উচ্চশিক্ষা, বাহিরের দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন।

বিএসবি ফাউন্ডেশনের এমন আয়োজন যেমন শিক্ষার্থীদের উৎফুল্ল করেছে তেমনি তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নতুন করে ভাবার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আর তাইতো দেশে পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের বাইরে গিয়েও উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অনেক শিক্ষার্থী।

নাসরিন সুলতানা নামে সদ্য এসএসসি পাশ এক শিক্ষার্থী বলেন, অনুষ্ঠানে আসার আগে ভেবেছিলাম হয়তো ফুল,ক্রেস্ট বা সনদই শুধু পাবো। কিন্তু অনুষ্ঠানে এসে অনেক উপকার হলো। দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া এখন অনেক সহজ মনে হচ্ছে। আমার মাও এসেছেন সাথে। মাও বেশ খুশি হয়েছেন।

বিএসবি ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা পেলো ৪ হাজার কৃতি শিক্ষার্থী 2

এদিকে মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, এই অনুষ্ঠানে উনারা পড়াশোনার এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার বিষয়ক নানান দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। যা শিক্ষার্থীদের সামনে চলার পথে অনেক কাজে আসবে। শিক্ষার্থীরা এখন থেকেই নিজেকে গড়ে তুলার কাজে লেগে যেতে পারবে। এই অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে মতো এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার বলেন, প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করছেন। এর পরে তারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিংবা মেডিকেলে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু শিক্ষার্থীর তুলনায় আসন সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পড়তে পারেন না। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেলে যদি সুযোগ না পায় তাহলে শিক্ষার্থীরা কি থেমে থাকবে? না, শিক্ষার্থীরা চাইলে অতি অল্প খরচে দেশের বাইরে থেকে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, মেডিকেল সাইন্স, আইটি, কিংবা বিজনেস—সব বিষয়ে খুবই কম খরচে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। মালেশিয়া, চায়না, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার মতো দেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কাউকে আর চাকরি খুঁজতে হবে না, চাকরি তাকে খুঁজে নিবে।

বিএসবি ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা পেলো ৪ হাজার কৃতি শিক্ষার্থী 3

লায়ন বাশার বলেন, আমাদেরকে এখন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভবিষ্যতে কে কি হবে। আর এখন থেকেই সে অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের দক্ষতার ওপর জোর দিতে হবে। তাহলে আর কেউ পিছিয়ে থাকবে না।

এ সময় তিনি দেশে ও দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই সাথে চট্টগ্রাম ক্যামব্রিয়ান কলেজের পড়াশোনার বিভিন্ন দিক ও সাফল্য তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের পাঁচটি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১৩টি ক্যাম্পাসে ক্যামব্রিয়ান কলেজের পাঠদান অব্যাহত আছে। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে ক্যামব্রিয়ারে পথ চলা শুরু। রাজধানী ঢাকার মতো চট্টগ্রামের হালিশহরেও রয়েছে ক্যামব্রিয়ানের ডিজিটাল ক্যাম্পাস। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম ক্যামব্রিয়ান কলেজ ফলাফলের দিক থেকে এই বোর্ডের অন্যতম শীর্ষ কলেজ।

২০২২ সালে এইচএসসিতে চট্টগ্রাম ক্যামব্রিয়ান কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন ২১৯ জন। শতভাগ পাশের পাশাপাশি এ+ পেয়েছেন ১৪৭ জন। বাকি সব শিক্ষার্থী জিপিএ ৪ এর উপরে ফলাফল করেছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।