বিভাগীয় পর্যায়ে অপরাজিতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সংলাপ অনুষ্ঠিত

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয় সাবেক, বর্তমান ও আগামীর সম্ভাব্য নারী জনপ্রতিনিধি তথা অন্যান্য নারীনেত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘অপরাজিতা নেটওয়ার্ক’’—এর আয়োজনে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ে অনতিবিলম্বে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবীটি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দাবীর সঙ্গে একাত্বতা পোষণ করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় কারিতাস হলরুমে খান ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত সুইজারল্যান্ডের আর্থিক সহায়তার ও হেলভেটাস সুইস ইন্টারকোপারেশনের কারিগরী সহায়তায় অপরাজিতা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্পের অন্যতম কর্মসূচি বিভাগীয় পর্যায়ে অপরাজিতাদের সাথে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের অগ্রগতি ও স্থানীয় পর্যায়ের (ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা ) মূল রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা, স্থানীয় পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করা, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে নারীদের সাধারণ আসনে মনোনয়ন আরও বৃদ্ধি করে রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ে অনতিবিলম্বে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জোরালো দাবী তোলা হয়।
বিভাগীয় অপরাজিতা নেটওয়ার্ক সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারুর সভাপত্বিতে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাংসদ কানিজ ফাতেমা আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দক্ষিণ জেলা সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দিলোয়ারা ইউসুফ, জাসদের নগর সভাপতি ভানু সিংহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অপরাজিতা নেটওয়ার্ক চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বনাজা বেগম।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, ইউনিয়ন অপরাজিতা নেটওয়ার্ক ও বিভাগীয় অপরাজিতা নেটওয়ার্ক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা নির্বাচন অফিসার এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা অপরাজিতাগণ।

অনুষ্ঠান থেকে তোলা দাবীসমূহ:
স্থানীয় পর্যায়ে কেবল মাত্র প্রতিকী অংশগ্রহণ নয়, নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলকে সাহসী ও কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে হবে। বিশেষত প্রত্যক্ষ নির্বাচনে নারীদের মনোনয়ন বৃদ্ধি করতে হবে। নারীদের সাধারণ ও চেয়ারম্যান পদে মনোন্নয়ন দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ ও সংসদ নির্বাচন-২০২৩-২৪ এ এক-তৃতীয়াংশ (৩৩%) নারীকে দলীয়ভাবে মনোন্নয়ন দেয়ার ব্যবস্থা করা।

রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের কমিটিতে নারীদের কার্যকরী ভাবে অর্থাৎ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক/ যুগ্ম সম্পাদক/ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নারীদেরকে সম্পৃক্ত করা।
রাজনৈতিক দলগুলো জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে নারীদেরকে সম্পৃক্ত করা এবং নতুন কমিটির অগ্রগতির হালনাগাদ প্রতিবেদন স্থানীয় নির্বাচন অফিস এবং কমিশনকে জানানো।
আরপিওতে সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন যে, রাজনৈতিক দলের সম্পাদক মন্ডলী বিশেষ করে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক- যে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী অন্তর্ভুক্তিকরণের বিষয়টি আবশ্যক করা।

উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ডের সহায়তায় বাস্তবায়িত ‘অপরাজিতা – নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ প্রকল্প ২০১১ সাল থেকে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সাল থেকে হেলভেটাস সুইস ইন্টারকোঅপারেশন চারটি সহযোগী সংস্থা যথা রূপান্তর, প্রিপ ট্রাস্ট, খান ফাউন্ডেশন ও ডেমক্রেসিওয়াচ -এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলাধীন ৬২টি উপজেলার ৫৪০টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধি তথা নির্বাচনে আগ্রহী নারী নেত্রীদের দক্ষতা উন্নয়ন, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় ও জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সংলাপসহ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সম্পূরক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। রাজনীতিতে নারীদের অধিকতর হারে অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আগামীর সমৃদ্ধতর ও অধিকতর সমতাভিত্তিক দেশ ও সমাজ গঠনে দলমত নির্বিশেষে সকলে প্রতি আহবান।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।