ভয়াল ‘ম্যারি এন’র ৩২ বছর—এখনো ঘুচেনি বেড়িবাঁধের দুঃখ

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এইদিনে বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূল দিয়ে বয়ে গিয়েছিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ‘ম্যারি এন’। সেদিন মধ্যরাতে আঘাতহানা এ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ‘ম্যারি এন’ এ তলিয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূল। লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলো পুরো উপকূলীয় অঞ্চল। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলো লাশ আর লাশ। বিস্তীর্ণ অঞ্চল পরিণত হয়েছিল ধ্বংস্তুপে। সেদিন আনোয়ারায় ২২০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে চলা ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২০ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ৩২ বছর পরও উপকূলবাসী ভূলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি।

১৯৯১ সালের পর থেকে উপকূলবাসীর দাবি ছিল ‘টেকসই’ বেড়িবাঁধের। ২০১৮ সালে ভূমিমন্ত্রী ও আনোয়ারা-কর্ণফুলী সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি সেই দাবি আমলে নিয়ে ৫৭৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজ শুরু করেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয়রা আনোয়ারার উপকূলীয় এলাকায় পাউবো’র বেড়িবাঁধ মেরামত কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিয়ের বিরুদ্ধে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তিনটি প্রকল্পে রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া থেকে পারকি সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে ২০১৪ সালের দিকে। এরপর থেকে ধীরগতিতে বেড়িবাঁধের ব্লক তৈরিতে সাগরের লবণাক্ত পানি ব্যবহারসহ নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিয়ের স্বত্বাধিকারী গোলাম রহমান রতন বলেন, ‘ভাল পানি না পাওয়ার কারণে সাগরের লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। টেন্ডার নেওয়ার সময় নির্মাণ সামগ্রীর দাম কম ছিলো। বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে কাজ চালিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেঁড়িবাঁধের পাশঘেঁষে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঁধের একশ মিটার দূর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে বাঁধের কোনো সমস্যা হবে না।

পারকি সমুদ্র সৈকতের দক্ষিণে ব্লক তৈরীতে দেখা গেছে, ঠিকাদারের লোকজন ব্লক তৈরিতে লবণ পানি ব্যবহার করে ব্লক তৈরি করছে। তৈরিকৃত ব্লকে শ্রমিকরা পানি দিচ্ছে সেটাও সাগরের লবণ পানি। ব্লক তৈরি সময় পাউবোর কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও এ সময় কাউকে দেখা যায়নি। এছাড়াও বার আউলিয়া থেকে পারকি সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার বাঁধের সড়ক নির্মাণেও ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট আর সৈকতের লবণযুক্ত বালি।

স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, পাউবোর বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য তৈরিকৃত ব্লকে সাগরের লবণ পানি ব্যবহারের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে বাঁধের সড়ক নির্মাণের কাজগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে সাগরের লবণ বালিসহ নিম্নমানের ইট। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোজ্জামেল হক বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে বেড়িবাঁধের কাজ চলছে। এখনও বিভিন্ন স্থানে বাঁধের কাজ পুরোপুরি হয়নি। জোয়ারের পানিতে এসব এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি বেঁড়িবাঁধের উপর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ইট ও সাগরের লবণ বালি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্লক তৈরী করছে এ এলাকায়। এখানে নিম্নমানের সামগ্রী ও লবণযুক্ত পানি ব্যবহার করলেও প্রতিবাদ করার মত কোনো লোক নেই।

এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দাশ এর মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।