ভাগ্য বদলাতে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমিয়ে অপহরণের শিকার ৫ যুবক

প্রতি মাসে ভালো বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থাসহ একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি—এমন সুবর্ণ সুযোগ ২১ বছর বয়সী যুবক সায়মন হোসেন আবিরের জন্য হাতছাড়ার করার মতো ছিল না। বাড়তি আয়ের আশায় পাড়ি জমান দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে। একটি চক্রের হাত ধরে সায়মনসহ আরও কয়েকজন পা বাড়ান থাইল্যান্ডের পথে। তবে সে পথে ছিলো ঘোর অন্ধকার, প্রতারণার ফাঁদ। আর সেই ফাঁদে পড়ে অপহরণ হয়েছেন সায়মনসহ আরও অনেকে।

জানা গেছে, গত ৫ মাস আগে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের হুন্ধীপপাড়ার শাহ্ জাহানের পুত্র সায়মন হোসেন আবিরের (২১) ও পতেঙ্গা এলাকার তার মামা মোহাম্মদ কায়সার হোসেন (৩২) ভাগ্য বদলাতে দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। তবে গন্তব্যে পৌঁছার বদলে তারা শিকার হোন অপহরণের। গত ১২ আগস্ট দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে গিয়ে অপহরণের শিকার হন তারা। তাদের সঙ্গে আরও ৩ বাংলাদেশিকে নিয়ে যাওয়া হয় থাইল্যান্ডে। সেখান থেকে তাদের থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে নিয়ে জিম্মি করেন বলে তারা স্বজনদের জানিয়েছেন।

দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে এক সঙ্গে ৫ জনই ভালো বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থাসহ একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি জিম্মিদের জীবনকে এমনভাবে বদলে দিয়েছে, যা তারা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। সেখানে পৌঁছানোর পরের ৫ মাস তাদের কী দুঃসহ জীবন কাটাতে হবে, তা হয়তো কখনও কল্পনাও করেননি। জিম্মি দুইজনই বৈরাগ ইউনিয়নের বারশত ইউনিয়নের কবিরের দোকান এলাকায় নানার বাড়িতে থাকতেন। অপর ৩ জন হলেন, মো. তানভীর আহাদ রাফি, মো. জুনায়েদ হোসেন পারভেজ ও তাহনুর খলিল্লাহ্।

জিম্মি সায়মন হোসেন আবিরের পিতা মো. শাহজাহান বলেন, ‘গত বছরের মে মাসে আমার ছেলে আবির ও আমার শালা কায়সার দুবাই যায়। সেখানে তাদের সাথে নোমান নামে ফেনীর এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। নোমান আমার ছেলে ও শালাসহ ১৭ জনকে ১৫০০ ডলারের বেতনে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে থাইল্যান্ড নিয়ে যায়। পরে থাইল্যান্ড থেকে তাদের মায়ানমার নিয়ে জিম্মি করে ফেলে। এসময় কৌশলে ৫ জিম্মি আমাদের মোবাইলে মেসেজ দিয়ে অপরহণের খবরটি জানায়। পরে নরসিংদী জেলার জুনাইদ নামের একজন পালিয়ে আসলে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হই।’

তিনি আরও বলেন, গত ৫ মাসে আমরা নিখোঁজ ১৭ জনের মধ্যে ১৩ পরিবারের স্বজনরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোন সুরাহা মিলেনি। সরকারী কর্মকর্তারা শুধু চেষ্ঠা করছেন বলে আশ্বস্থ করেন। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

জিম্মি থেকে অপহৃত মো. জুনায়েদ হোসেন পারভেজ নামে এক যুবক পালিয়ে আসলে ঘটনাটি জানতে পারেন তারা। এরপর থেকে তাদের উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন তারা। গত ৫মাস ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে হতাশায় ভুগচ্ছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।

এদিকে পালিয়ে আসা নরসিংদী জেলার মো. জুনায়েদ হোসেন পারভেজ (২৫) এক ভিডিওতে অপহরণের পর তাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেন। ভিডিওতে বলতে দেখা যায়, ফেনী জেলার নোমান নামের এক ব্যক্তি আমাদেরকে ভালো চাকরির অফার দিলে আমরা তাকে ৫ হাজার ডলার করে ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে ৫ বন্ধুসহ ১৭ বাংলাদেশি থাইল্যান্ড যাই। থাইল্যান্ডে গেলে কিছু লোক আমাদের জিম্মি করে একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়। তাদের সবার হাতে একে-৪৭ অস্ত্র দেখেছি।

আমরা বুঝতে পেরে দুবাইয়ে নোমানকে ফোন করলে তিনি বলেন, কোন সমস্যা হবে না ওই লোকগুলো আমাদের। তারা তোমাদের সহযোগিতা করবে। পরে আমাদেরকে একটি নৌকা করে মায়ানমার নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে বন্দি করে আমাদের ভিসা ও পাসপোর্ট নিয়ে ফেলে এবং আমাদের ভয়ভীতি দেখায়। সেই ঘরে আরও অনেক লোক আমরা দেখতে পেয়েছি।

তিনি বলেন, তারা জানালো তাদেরও এক বছর-দুই বছর ধরে বন্দি করে রেখেছে। আমাদের নিয়মিত খাবার দিত না, আমরা কয়েকবার আত্মহত্যাও করতে চেয়েছি। এসব বন্দিদের মাধ্যমে অপহৃতরা বিভিন্ন কাজ করিয়ে থাকে। আমি কৌশলে এক ব্যক্তির সহযোগীতায় তাদের থেকে পালিয়ে আসতে স্বক্ষম হলেও অন্যরা কেউ আসতে পারেনি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।