সুমন শঙ্কর রায় চৌধুরী ১৯৭২ সালে দেশ ছেড়ে ভারত গিয়ে হয়েছেন সেদেশের নাগরিক। আধার কার্ড করে নিচ্ছেন সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়াতে আসেন।
বেড়াতে আসার ফাঁকে গ্রামের বাড়ির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে চট্টগ্রাম নগরে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী নামে। বিষয়টি এতদিন গোপন থাকলেও সম্প্রতি তিনি তার ভাইদের আট একর সম্পত্তি ভূমিদূস্যুদের হাতে তুলে দেন জাল ওয়ারিশ নামামূলে। ওয়ারিশ সনদ এবং এর আগে ভোটার হওয়ার সময় ব্যবহার করেছে ইউপি চেয়ারম্যানের জাল সনদ। স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় গত সোমবার (১৯ জুন) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
চেয়ারম্যান অভিযোগে উল্লেখ করেন, সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা সেজে ওয়ারিশ সনদপত্র, জাতীয়তা সনদ, হোল্ডিং ট্র্যাক্সসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরী করেন ভারতের এই নাগরিক। ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্রে সুমন শঙ্কর রায় চৌধুরী নাম ব্যবহার করলেও বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্রে তার নাম ব্যবহার করেছেন বিশ্বজিত চৌধুরী নামে। তবে এ ব্যক্তি বর্তমানে ভারতের বসাবাস করছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
ভারতের এ নাগরিক চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুড়িং নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অস্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে খুলশী মতিঝর্ণা এলাকার ভোটার হয়েছেন। আর ভোটার কার্ডে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করেছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড।
তবে ভারতের নাগরিক ভোটার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডবলমুরিং এলাকার নির্বাচন কর্মকর্তা মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘বিশ্বজিত চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে তাকে ভোটার করা হয়েছে।
এছাড়াও ওই ব্যক্তির ভোটার কার্ডটি ব্যবহার করে আনোয়ারার একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট পরিকল্পিত ভাবে ৮ একর জমি রেজিষ্ট্রারী করে নেওয়ার অভিযোগও উঠে। এতে করে বাংলাদেশে আনোয়ারার বসাবসরত সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডর বাসিন্দা ভারতের নাগরিক সুমন শঙ্কর রায় চৌধুরীর বড়ভাই রঞ্জিত চৌধুরী বসত ভিটা হারাতে বসেছে ভূমিদস্যুদের কাছে।
ভারতের নাগরিকের বড়ভাই রঞ্জিত চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই সুমন শঙ্কর রায় চৌধুরী ১৯৭২ সালে ফুফার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ভারত চলে যায় এবং সেখানে ভোটার হয়ে যান। ভারতের নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাস করছে তার পরিবার নিয়ে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে বেড়াতেও আসতো। সে সুযোগে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা তাকে কু-পরামর্শ দিয়ে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ওয়ারিশ সনদ, জাতীয়তা সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরী করে শহরের মতিঝর্ণা লালখান এলাকায় ভোটার হন।’
তিনি আরও বলেন, সদর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা সিন্ডিকেট করে আমার বসতভিটা দখল নিতে আসলে বিষয়টি আমি জানতে পারি। ভূমিদস্যুরা জানায়, আমার ছোটভাই ভারতের বাসিন্দা তাদের কাছে নাকি আমাদের বাড়ি ভিটা বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোরদাবী জানাচ্ছি প্রশাসনের প্রতি।
চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিশ্বজিত চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিভিন্ন সনদে চট্টগ্রাম শহরে অস্থায়ী ঠিকানা ও আনোয়ারা সদর ইউনিয়ন স্থায়ী ঠিকানায় দেখিয়ে ভোটার হয়েছেন। তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ভারতে বসবাস করছেন। বিষয়টি নজরে আসলে আমি নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরের লিখিত অভিযোগ করি। ওই ব্যক্তি আনোয়ারা সদরে ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরিচয়ে রঞ্জিত চৌধুরীর পৈত্রিক ৮ একর জমিও ভূমিদস্যুদের কাছে বিক্রি করেছেন বলেও আমরা জেনেছি। দলিলটি বাতিলের জন্য মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাল সনদ ও দলিল তৈরীতে যারা জড়িত, তাদের তথ্যও আমি নিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করব এবং জাল সনদ বাতিলের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি।’
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।