ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে বিনাশুল্কে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুযোগ প্রধানমন্ত্রীর সফরের বড় অর্জন: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ। তারমধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যসহ বিনাশুল্কে পণ্য রপ্তানির করার সুযোগ, যেটির জন্য বহু বছর ধরে বাংলাদেশ চেষ্টা করে এসেছে।

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) আয়েজিত বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় চট্টগ্রামের ৩৬ জন সাংবাদিকের হাতে ৩৪ লাখ টাকার অনুদানের চেক তুলে দেয়া হয়।

সফল ভারত সফর করে বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এই ভারত সফর নিয়ে বিএনপি নানা ধরণের কথা বলেছে, এখন নিশ্চই চুপসে গেছে। কিন্তু এরপরও বিএনপির ফখরুল সাহেবেরা আজকালের মধ্যে কিছু একটা বলবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত চমৎকার একটি ফলপ্রসূ হয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ন্যায্যতার ভিত্তিতে। আমাদের সরকারই ভারতের কাছ থেকে সমস্ত কিছু আদায় করেছে। ১৯৭৪ সালে ছিটমহল চুক্তি হয়েছে। সেই ছিটমহল আমাদের অধিকারে চার দশকে কেউ আনতে পারেনি। তারা কোন্ দেশের নাগরিক সেটা বলতে পারতো না। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ছিটমহলগুলো আমাদের অধিকারে এনেছেন। ন্যায্যতার ভিত্তিতে যে সম্পর্ক সেটির বড় প্রমাণ হচ্ছে, আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের সাথে মামলা করে সমুদ্রসীমা জয়লাভ করেছি।

প্রকৃতপক্ষে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সেটি আরো নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। সেটির প্রমাণ হচ্ছে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য বিনাশুল্কে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করে দেয়া।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের হাজার পণ্যের মধ্যে মাদকসহ মাত্র বিশটি পণ্য ছাড়া ভারত আমাদেরকে ট্যারিফ সুবিধা দিয়েছে। যেটি বিএনপি আদায় করতে পারে নাই। খালেদা জিয়া তো ভারতে গিয়ে আমাদের গঙ্গার পানি হিস্যার কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলেন। সেটিও আদায় করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

সারাদেশে আজকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের একটি আশা-ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, একজন সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করলে তাঁর পরিবারকে এককালীন তিন লাখ টাকা দেয়া হয়। একজন সাংবাদিক অসুস্থ হলে তাকে পঞ্চাশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা অনুদান দেয়া হচ্ছে। করোনাকালে ভারত পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা নেপালসহ এই উপ-মহাদেশের কোন দেশে সাংবাদিকদের করোনা সহায়তা করা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সরকার করোনাকালীন সহায়তা হিসেবে চার হাজার সাংবাদিককে সহায়তা দিয়েছে, এটি এখনও চলমান আছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকদের দাবি ছিল, একটা কল্যাণ তহবিল গঠন করার। প্রথমে একটা কল্যাণ তহবিল গঠন হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমি কতদিন থাকি ক্ষমতায় জানি না, একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিতে চাই। তাঁরই আগ্রহে সংসদে পাশ করা আইন দ্বারা সংবিধিবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। যেখানে প্রতিবছর সরকার অনুদান দেয়। শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকেও অনুদান গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণের ক্ষেত্রে আমরা কখনো কে কোন দল বা মতের সেটি দেখি না। আমি দল করি, আমি দলীয় সরকারের মন্ত্রী, কিন্তু যখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করছি তখন সবাইকে দুই চোখে সমভাবে দেখার চেষ্টা করি, রাষ্ট্রের সাহায্য যেন সবাই পায়। যারা প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে কালকেই সরকার নামিয়ে দেয়, আমাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটায়, তাদেরকেও আমরা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সহায়তা করেছি।

তিনি বলেন, কিন্তু মাঝে মধ্যে দেখি কেউ কেউ বিশ্ব পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালায়। কিছু কিছু সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া বিশ্ব পরিস্থিতিকে আড়াল করে বাংলাদেশের পরিস্থিতিটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়, এটি নতুন কিছু নয়। পদ্মাসেতু যখন আমরা নির্মাণ শুরু করি তখনো বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর যেভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল, কিন্তু বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে হেরে যাবার পর তারা ক্ষমা চায়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউজ যেন সাংবাদিকদের জন্য গ্রুপ বীমার ব্যবস্থা করে সে অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটি কিন্তু আমাদের ওয়েজবোর্ডের মধ্যেও বলা আছে। সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো প্রতিটা মিডিয়া হাউজে তাগাদা দিবেন ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী যেন সাংবাদিকদের জন্য গ্রুপ বীমার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটি করলে একজন সাংবাদিক অসুস্থ হলে এবং মৃত্যবরণ করলে বীমা কোম্পানি থেকে টাকা পাবে। এতে যে খুব ব্যয় হয় তা কিন্তু নয়, এটি ইচ্ছা এবং চর্চার ব্যাপার।

সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ন সম্পাদক সবুর শুভুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য কলিম সরওয়ার, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ প্রমুখ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।