বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণই নেই। রাত দিন সমানতালে ঝরছে বৃষ্টি। টানা বর্ষণে ইতোমধ্যে তিন পার্বত্য জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে কয়েক হাজার লোক। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন। পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে প্রশাসনের তৎপরতায় লোকজন রাতের বেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসলেও দিনের বেলায় আবারো নিজ ঘরে ফিরে যাচ্ছে।
এদিকে, অব্যাহত বর্ষণের ফলে বান্দরবান শহর প্লাবিত হয়েছে। বসতঘরসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিসে পানি উঠেছে। গতরাত (সোমবার) থেকে বান্দরবান জেলায় বিদ্যুৎ বিহীন। নেই মোবাইল নেটওয়ার্কও।
এদিকে, টানা বর্ষণের ফলে খাগড়াছড়ি জেলার কোথাও পাহাড় ধস কিংবা বন্যার খবর পাওয়া না গেলেও দুর্যোগের ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন।
রাঙামাটিতে কয়েকটি জায়গায় রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে রাস্তার ওপর মাটি ধসে পরে এবং গাছ উপড়ে পরে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অবশ্য প্রশাসনের তদারকিতে এবং সড়ক বিভাগের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব মাটি ও গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাাবিক করা হচ্ছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকি এড়াতে ও পানিবন্দি লোকজনদের সহায়তায় প্রতিটি উপজেলায় প্রশাসনের টিম কাজ করছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
টানা বর্ষণের ফলে রাঙামাটির দশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাপ্তাইয়ে মাটি ধসে কয়েকটি বসতঘর ধসে পড়েছে।
রাইখালী ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এসএম নাছির উদ্দীন জানান, রাইখালী রিফিউজি পাড়া, বড় ঝিরিপাড়া ও রাইখালী বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে টিুট, ভুট্টু, জাহাঙ্গীর আলম, আজিম, আবদুর রশীদ, হারুন ও নেজামের ৮টি ঘর পাহাড় ধসে সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হয়েছে। বড়ইছড়ি কাপ্তাই ক্লাবের পাশের অনিল তনচংগ্যা ও চিৎমরম সিড়িঁঘাট এলাকার আরও ২টি ঘর বিধস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি রাইখালী ইউপি চেয়ারম্যান মংক্য মারমাকে অবগত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, রাইখালীর ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের খবর জানতে পেরেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বহু মাছের প্রজেক্ট এবং পুকুরের পানি পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানের রাস্তা-ঘাট, পুকুর-জলাশয়।
বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা বলেন, উপজেলা সদরে বেশ কিছু সমতল এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের আশংকা দেখা দিয়েছে। ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
জুরাছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দুমদুমম্যায় বন্যায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এদিকে, চলমান অতিবৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার ফলে পাহাড় ধসে রাঙামাটির লংগদুতে ১নম্বর আটারকছড়া ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ড উত্তর ইয়ারংছড়ি এলাকায় তিনটি বসতবাড়ি ও গৃহপালিত পশু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকিব ওসমান জানান, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয় আসার জন্য গতকালও আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত লোকজন।
এদিকে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে গাছ ও পাহাড়ের মাটি পরে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অবশ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের উপর পড়া মাটি ও গাছ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
তিনি জানান, জেলার সর্বত্র যেখানেই পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে। সেখানে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিতে থাকা ও পানিবন্দি লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে কাজ করছে প্রশাসন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।