ভিনদেশি আরসিজিটির পরিচালনায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ভিড়লো জাহাজ

চট্টগ্রাম বন্দরের নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার জন্য গত ডিসেম্বরে সৌদি আরবের রেড সি গেইটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে (আরসিজিটি) চুক্তির পর দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভিড়েছে বাণিজ্যিক জাহাজ মায়েরস্ক দাভাও (MAERSK DAVAO)।
সোমবার (১০ জুন) বিকেল ৩টায় পিসিটিতে জাহাজটি ভিড়ে। এর মধ্য দিয়ে পিসিটির অপারেশন কার্যক্রম শুরু হলো।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, আরএসজিটি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরউইন হেইজসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ঐতিহাসিক দিন। চট্টগ্রাম বন্দরের বয়স ১৩৭ বছর। এ দীর্ঘ পথচলায় প্রথমবারের মতো একটি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটর গ্লোবালি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়েকে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছি। চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে আগামী ২২ বছর টার্মিনালটি তারা অপারেট করবে। এ অপারেশন কার্যক্রম আজ শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ইতিহাসে তথা চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে একটি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় আজ প্রথম জাহাজ ভিড়েছে।’

ভিনদেশি আরসিজিটির পরিচালনায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ভিড়লো জাহাজ 1

তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্ত চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়। আশাকরি, এভাবে বিদেশি গ্লোবালি বড় বড় পার্টনারদের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। যাতে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার অনেকগুণ বেড়ে যাবে। আমাদের অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। নতুন প্রযুক্তি এখানে আসছে। আরও আসবে। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা লাভবান হবো। এখানে কাজ করে আমাদের লোকজন দক্ষ হবে। দেশে বিদেশে তাদের চাহিদা বেড়ে যাবে। ল্যান্ডলর্ড প্রক্রিয়ায় বন্দর চলে বিশ্বজুড়ে। আমরা পিসিটি দিয়ে সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আজ থেকে পুরোদমে এ টার্মিনালের কাজ শুরু হলো। রেড সি গেটওয়ে পিসিটিতে দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। রেভিনিউর একটি বড় অংশ শেয়ার করবে। সব ইক্যুইপমেন্ট তাদের নিজস্ব। ২২ বছর পর সব ইক্যুইপমেন্ট আমাদের বন্দরের হয়ে যাবে। বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া সাধারণ বিষয়। এর ফলে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা বাড়বে, সেবা বাড়বে, রেভিনিউ কালেকশন বাড়বে।’

প্রসঙ্গত, লন্ডনভিত্তিক আরএসজিটিআইর অধিভুক্ত আরএসজিটি। আরএসজিটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত, সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় বন্দর উন্নয়নকারী এবং অপারেটর, যার ফ্ল্যাগশিপ টার্মিনাল জেদ্দা ইসলামিক পোর্টে অবস্থিত। যা সৌদি আরব এবং লোহিত সাগরের বৃহত্তম কনটেইনার টার্মিনাল। বছরে ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন টিইইউস হ্যান্ডলিং করে থাকে।
৫৮০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের পিসিটিতে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। পিসিটি ও সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড মিলে ২ লাখ ৮ হাজার বর্গমিটার। পিসিটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট ও প্রযুক্তিনির্ভর বন্দর ব্যবস্থাপনায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে চারটি উন্নত উচ্চক্ষমতার শিপ টু শোর (এসটিএস) ক্রেন, রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি) ও আধুনিক হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। যা টার্মিনালের বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা আড়াই লাখ টিইইউস থেকে ৬ লাখ টিইইউস পর্যন্ত বাড়াবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।