ভিসানীতি নিয়ে কথা বলার আগে আপনাদের একটু লজ্জিত হওয়ার দরকার ছিলো: হানিফ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঘোষিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, ‘ভিসানীতি নিয়ে কথা বলার আগে আপনাদের একটু লজ্জিত হওয়ার দরকার ছিলো, কারন আপনাদের নেতা তারেক রহমান, যাকে নিয়ে আপনারা এত বড়াই করছেন সেইতো বাংলাদেশে প্রথম স্যাংশনের শিকার হয়েছেন। তাকেই আমেরিকা ২০০৮ সালে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রথম স্যাংশন দিয়েছিলো।’

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর এলাকার হাইওয়ে চত্তরে আয়োজিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির রোড মার্চ কর্মসূচি আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আল্টিমেটামের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির তথাকথিত রোড মার্চ শেষ, এখন ১৮ অক্টোবরের আল্টিমেটাম। কথায় কথায় আল্টিমেটাম, আল্টিমেটামের কোন শেষ নাই। বিএনপির মির্জা ফখরুলকে বলি, ‘আল্টিমেটাম দেয়ার আগে একটু লজ্জার বিষয়টা ভেবে নিয়েন। অবশ্য আপনারাতো লজ্জা পান না, আপনাদের লজ্জা নেই। সেই আল্টিমেটাম শুরু হয়েছিলো ২০১৩ সাল থেকে। একদিকে খালেদা জিয়ার মামলার ট্রায়াল চলছিলো অন্যদিকে বিএনপি এতিমের টাকার লোভ যে সামলাতে পারে না তাদের সেই তথাকথিত নেত্রীকে মামলা থেকে বাঁচাতে সারা দেশে জালাও পোড়াও শুরু করেছিলো। আজ ২০২৩ সাল এখনো তাদের সেই আল্টিমেটামের শেষ হলো না।’

হানিফ বলেন, ‘তারা বলে জনগণ আর এ সরকারকে চায় না। তাহলে কাকে চায়? আপনাদের চায়! আপনারা কারা? আপনাদের এক নেত্রী এতিমের টাকার লোভ সামলাতে না পেরে আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। আরেক নেতা আপনাদের মহান নেতা তারেক রহমান। যার বিরুদ্ধে চুরি, মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাতের মামলায় শুধু যাবজ্জিবন দন্ড নয়। সুদূর সিঙ্গাপুরের আদালতও তার বিরুদ্ধে দন্ড দিয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজাকারের সন্তান আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘মির্জা ফখরুল আপনি কার সন্তান আমরা তা জানি। আপনি চোখা রাজাকারের সন্তান। আপনি এবং আপনার পরিবার কি তা আপনার এলাকার মানুষও জানে।’

বৃহস্পতিবার মিরসরাইয়ে বিএনপির রোড মার্চ কর্মসূচিতে দেয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গতকাল আপনাদের মিরসরাইতে চট্টগ্রামে বাড়ি এমন একজন বিএনপি নেতা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা আবার মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছি। তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা মানায় না। তারা রাজাকারের শাবক তারা রাজাকারের বংশধর। তাদের মুখে এমন বক্তব্য মানায় না।’

২০০১ পরবর্তী বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, ‘বিএনপির সময়ে কয়েকটি উন্নয়ন হয়েছিলো, তার মধ্যে একটি পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। আরেকটি অর্জন ছিলো তা হলো এ রাষ্ট্রকে জঙ্গীবাদ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। একযোগে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে আপনারা দেশকে বিশ্ব দরকারে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।’

ভিসানীতি নিয়ে কথা বলার আগে আপনাদের একটু লজ্জিত হওয়ার দরকার ছিলো: হানিফ 1

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, ‘আমরা মিরসরাইবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণি। কারণ তারও ইতিহাস আছে। ১৯৭২ সালে মহামায়া সেচ প্রকল্পের কথা প্রথম বঙ্গবন্ধুকে আমি বলেছিলাম। তিনি তাৎক্ষণিক এ প্রকেল্পর জন্য একটি পাইলট প্রকল্প দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এছাড়া ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে ১শটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কথা বললেন তখন আমি ড. মশিউর রহমানকে নিয়ে মিরসরাইয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রস্তাব আমি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিলাম এবং তিনি তাৎক্ষণিক আমার কথা রাজি হয়ে যান।’

আগামী নির্বানের প্রসঙ্গ টেনে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগামীতে আমি নির্বাচন করতে চাইছি না। সেক্ষেত্রে আমার ছেলে রুহেল মনোনয়ন চাইবে। তবে আপনাদের কথা দিতে হবে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই সবাই কাজ করে আবারো জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।’

আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান এমপি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে আজ নির্বাচনের ঢেউ উঠেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল আগামী ১৮ অক্টোবর চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আমি বলতে চাই সেদিন বিএনপির শোকযাত্রা হবে।’

মিরসরাই আসনে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মোশাররফপুত্র রুহেলের নাম ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘মোশাররফ ভাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। তবুও আমি বলতে চাই, আমার ভাতিজা রুহেল (মোশাররফ পুত্র) আগামীতে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করুক।’

ভিসানীতি নিয়ে কথা বলার আগে আপনাদের একটু লজ্জিত হওয়ার দরকার ছিলো: হানিফ 2

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিরসরাই উপজেলায় শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ ঘিরে জনতার ঢল নেমেছে। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকাল তিনটায় শুরু হওয়া শান্তি সমাবেশকে ঘিরে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে দলে দলে নেতাকর্মী ও সমর্থনকারীরা জড় হয় সভাস্থলে।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে সমাবেশস্থলে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থনকারীরা উপস্থিত হয়। নেতাকর্মী ও সমর্থনকারীদের উপস্থিতি এক পর্যায়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় সমাবেশ স্থল। সমাবেশকে ঘিরে প্রায় ৩০ হাজার নেতা কর্মী সমবেত হয় বলে ধারনা করা হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন—কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মোজাম্মেল হক, ফটিকছড়ির সাংসদিয় আসনের সংরক্ষিত নারী এমপি খাদিজাতুল কোবরা সনি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের পুত্র ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান রুহেল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এরাদুল হক ভুট্টো, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন তপুস, বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন, চট্টগ্রাম উত্তরজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন দিদার।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, সীতাকুণ্ড আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন, সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুনসহ প্রমুখ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।