ভয়াল ২৯ এপ্রিল– ‘৩১ বছর পরও ডর লার আঁরাত্তে’

২৯ এপ্রিল, একটি দুঃস্বপ্নের দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে আড়াইশ’ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত এবং ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস তছনছ করে দিয়েছিল উপকূলীয় জনপদ। সেদিনের ঘটনায় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।

৩১ বছর পরও সেদিনের কথা মনে পড়লে উপকূলের মানুষ বলেন, ‘৩১ বছর পরও ডর লার আঁরাত্তে’। কারণ উপকূল রক্ষায় এখনো শেষ হয়নি বেডিবাঁধের কাজ। কোটি টাকার প্রকল্প বেড়িবাঁধের কাজ চলমান থাকলেও কাজ নিয়ে স্থানীয়দের আছে অনেক অভিযোগ।

১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর গত ৩০ বছরে বহুবার আনোয়ারা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কার হয়েছে। কিন্তু কাজের মানে নয়-ছয়ে তিন দশকে সব টাকাই জলে গেছে। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে নয়, অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা জোয়ারের পানিতেও এখানে বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। বছর না ঘুরতেই বিলীন হয়ে যায় বাঁধ।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উপকূলবাসীর সুরক্ষায় স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির প্রচেষ্টায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। বেড়িবাঁধ পুরোপুরি নির্মিত হলে পাল্টে যাবে উপকূলের চিত্রও। তবে চলমান বেডিবাঁধ প্রকল্পের কাজ এ বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬৬ শতাংশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী।

পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, আনোয়ারা উপকূলের বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া খালের বেড়িবাঁধও নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বিগত দুই বছর কাজ কিছুটা থমকে ছিল। বর্তমানে পুরোদমে চলছে প্রকল্পের কাজ। আশা করছিন শীঘ্রই উন্নয়ন কাজ শেষ হবে।

সরোজমিনে (বৃহস্পতিবার ২৮ এপ্রিল) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দোভাষীর হাট এলাকা থেকে খুদ্দ্যে গহিরা, পরুয়াপাড়া ফুলতলী এলাকাসহ উপকূলে চলছে বেড়িবাঁধ নির্মানের দৃশ্যমান কর্মযজ্ঞ। এ বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে উপকূলবাসীর জীবনযাপনের চিত্র।

স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আনোয়ারায় টেকসই উপকূলীয় বেড়িবাঁধের বড় প্রকল্পে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কেউ করেন না তরদারকি। কোটি টাকার এই প্রকল্পে বেড়িবাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণ কাজে সাগর থেকে ড্রেজিং করে তোলা বালুতে ভরাট করে দেয়া হয়েছে নির্মিত সড়কের গর্ত। এ যেন কইয়ের তেলে যেন কই ভাজা। শুধু বালি দিয়ে বাঁধ তৈরি শেষ না, সৈকত থেকে রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী মহল বালু মাটি বিক্রির অভিযোগও তুলেন স্থানীয়রা। এসরের ফলে সাগরের উত্তাল জোয়ারের তোড়ে মুহূর্তে তা বিলীনের আশংকা স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল ফয়েজ বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী একটি টেকসই বেড়িবাঁধ। আজ এ এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত। তবে যারা ঠিকাদারীতে রয়েছেন তারা তো অনিয়ম করছেন, নিচ থেকে বালু নিয়ে উপরে ভরাট করছে। কয়দিন টিকবে এ বেড়িবাঁধ সেটা নিয়ে ভয়ে আছি আমরা। তারপরও অনেকটা সুরক্ষার মধ্যে আছি, এখন ঘুর্ণিঝড় আসলে আমাদের আর পানি উঠার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে দৌঁড়াতে হয় না।

রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও স্থানীয় চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, ‘২৯ এপ্রিল দিনটি আসলেই আমরা শিউরে উঠি। এ দিনে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আমার পরিবারের ভাই-বোনসহ নিহত হন আত্মীয় স্বজন অনেকেই। সে আঘাতে বিলীন হয়ে যায় আমাদের বসতভিটা ও কবরস্থান। সেদিন থেকে এলাকার মানুষের দাবী টেকসই বেড়িবাঁধের।’

তিনি আরও বলেনন, ‘২৯ এপ্রিল যদি টেকসই বেড়িবাঁধ থাকত তাহলে এতো ক্ষয়-ক্ষতি হতো না। আজ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার এটি বাস্তবে রূপ দিয়েছে। বর্তমানে আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও পটিয়া উপকূলে ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষের পথে। এখন আমরা রায়পুরবাসী সুরক্ষিত। রায়পুরের মানুষ এখন আর ঘুর্ণিঝড়কে ভয় করে না। বেড়িবাঁধ পুরোপুরি নির্মিত হলে পাল্টে যাবে রায়পুরের চিত্রও।’

১৯৯১ সালের এইদিনকে স্মরণ করে ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল ঘরে-ঘরে মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি, দোয়া কামনা, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি পালন করে আনোয়ারা, বাঁশখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ সমগ্র উপকূলীবাসী।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।