মুসলমানের ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ধর্মের অনুসারিগণ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এবং পবিত্র হাদিসকে অনুসরণ করেন। ইদানিং কিছু সংখ্যক শিক্ষিত মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম ধর্মকে মুসলিম ধর্ম বলে সম্বোধন করেন। সেটি তারা ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান না রাখতে রাখেতে হঠাৎ ধর্ম নিয়ে কোনো আলোচনা করতে গেলে তাই বলে থাকেন। সেটি তাদের অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনাদর্শ মুসলিম জাতি অনুকরণ, অনুসরণ ও তাঁর নির্দেশাবলী পালন করেন। ধর্মের নিয়মকানুন পালন করার যে বিধানগুলো কোরআন এবং হাদিসে আছে তা নিয়মের মধ্যে দিয়ে যথাযথভাবে পালন করতে হয়। যেমন-কালেমা বা নিয়ত বা ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত। এগুলো বাধ্যতামুলক পালন করতে হয়। তৎমধ্যে প্রথম ফরজ যেটি তা হল-কালেমা বা ঈমান। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণের সাথে সাথে তাকে আল্লাহ ও রাসুলের বাণী আযানের মাধ্যমে পৌঁছানো হয়। শিশুটি পৃথিবী সম্পর্কে জানার সাথে সাথে তাকে প্রথম ফরজটি শুনানো ও পড়ানো হয়। সেটি পালন করা খুবই সহজ। তৎপরবর্তী যে ফরজটি সেটি হল-নামাজ। নামাজ দৈনিক ০৫ (পাঁচ) বার আদায় করা বাধ্যতামূলক। নামাজ আবার গোপনে পড়ার জন্য নয়। নামাজ আদায় করতে হলে দৈনিক পাঁচবার মসজিদে গিয়ে আদায় করতে হয়। কোন কারণে মসজিদে যেতে না পারলে যে কোন পবিত্র স্থানে আদায় করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নামাজ মসজিদে আদায় করতে হবে। মসজিদ মুসলিমদের সর্বোচ্চ পবিত্র স্থান। যেখানে মুসলিমদের সকল সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। মুসলিমদের মধ্যে যারা নিয়মিত মসজিদে নামাজ আদায় করেন তাদের মাধ্যমে মসজিদের জন্য একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। তাদের মাধ্যমে মসজিদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। পৃথিবীব্যাপি মুসলিম দেশগুলোতে মসজিদের সংখ্যা অনেক। মুসলিম জাতি তাদের নিজেদের ঘর যেমন হোক না কেন তার দিকে খেয়াল নেই। পক্ষান্তরে আয়ের একটি বিশেষ অংশ মসজিদে দান করেন, সওয়াব প্রাপ্তির আশায়। যে দান দিয়ে মসজিদটি সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। তবে কোন কোন স্থানে সরকারিভাবে মসজিদের নির্মাণ কাজও হয়ে থাকে। মসজিদে যারা নামাজ আদায় করেন তাদের মুসল্লি বলা হয়। নামাজ আদায় করার সময় কোন মুসল্লি কোন রকম শব্দ বা অন্য কোন কার্যক্রম করতে পারে না। শুধু ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করতে হয়। ইমাম সাহেব যা করেন তাকে অনুসরণ করে মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে হয়। মুসলিম সমাজের বড় প্রতিনিধিত্ব করেন ইমামগণ। ইমামগণ মুসলিম সমাজে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি, যাকে সমাজের সবাই সম্মান করেন। মুসলিম পরিবারে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার সময় হতে মৃত্যুবরণ করে কবরে শায়িত হওয়া পর্যন্ত ইমামগণ বিভিন্নভাবে ধর্মীয় কাজ করেন ও তাঁদের প্রয়োজন হয়। ইসলামী আইনে বিচার, ধর্মীয় সমাধানসহ আরো অনেক কাজ ইমামগণ করে থাকেন।
এত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে মুসলিম জাতি এবং সামাজ তাঁকে কিভাবে দেখা হয়। ইমাম সাহেবকে একটি মসজিদে নিয়োগ দেয়া ও তাঁর বেতনের উৎস সুনির্দিষ্ট নেই। প্রতিনিয়ত গ্রামবাসী ও মুসল্লিদের নিকট হাত পাততে হয়, যেটি খুবই অনাকাঙ্খিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মসজিমের সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রচুর।
এখন জানা যাক, ইমাম সাহেবের অবস্থান সম্পর্কে। মসজিদের শ্রেণিভেদে ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াতে হয় ইমামকে। সময় অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াতে দৈনিক ইমাম সাহেবের প্রয়োজন হয় মাত্র ২:৩০ (অর্থাৎ আড়াই ঘন্টা)। প্রতি ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ১৫ (পনের) মিনিট করে সময়ের প্রয়োজন। দৈনিক এ আড়াই ঘন্টা চাকরি করার জন্য ইমামগণের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি কিভাবে হয়ে থাকে তা জানার চেষ্টা করি।
সরকারী, বেসরকারী, আধা সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানে বেতন কাঠামো আছে। সর্বনিম্ন বেতন ও সর্বোচ্চ বেতন। তৎমধ্যে প্রতি বছর তাদের বেতনস্কেল অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে বেতন বৃদ্ধি পায়। যেটি পেনশনের সময় তার সর্বোচ্চ বেতন হিসেবে গণ্য করে পেনশন প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে ইমাম নিয়োগে কোন নিয়ম-কানুন সুনির্দিষ্ট নেই। তাদের জন্য কোন বেতন স্কেল নির্ধারন করা নেই। যেটি সর্বনিম্ন হোক বা সর্বোচ্চ হোক। বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি নেই। বেশিরভাগ ইমামের অন্য কোন আয়ের উৎসও নেই। সামান্য ক’জন নিকটবর্তী মাদ্রাসায় চাকুরী করেন। সবার বেলায় তা হয় না। বিভিন্ন জেলা শহরে বা উপজেলায় প্রধান মসজিদটিকে কেন্দ্রীয় মসজিদ বলা হয়। তার প্রধান ইমামের বেতন মাত্র বার হাজার টাকা প্রতি মাসে। সেটি বাংলাদেশের বেতন স্কেলের মধ্যে কোনটিতে পড়ে না। অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও কিছু আছে কিন্তু তা খুবই অপ্রতুল। দ্বিতীয় বড় মসজিদ বাজার মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন আট হাজার টাকা প্রতি মাসে। তাঁর অন্য কোন সুযোগ সুবিধাও নেই। তার কোনো অভিযোগও নেই। বেতনের বাইরে তাঁর অন্য আয় দাওয়াত পড়া, ঝাড়-পোক কারা, তাবিজ দেয়া। সেটিও নিয়মিত হয় না। প্রধান ইমামের পর একজন দ্বিতীয় ইমাম আছে, মুয়াজ্জিন আছে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আরো কয়েকজন লোক থাকে। তাদের কারও বেতন কোন সুনির্দিষ্ট স্কেলে হয় না। নেই তাদের বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি। তাদের পেনশনের কোন বিধান নেই। বর্তমান বাজারে আট-দশ হাজার টাকা বেতন দিয়ে কি তাদের সংসার চলে? চলে না। তাহলে করণীয় কি? ইমাম সাহেবদের সাথে আলাপে জানা যায় বেতন নিয়ে তাঁদের অনেক দুঃখ আছে। কিন্তু কে তাঁদের সে সমাধান দেবে?
মুসলিম সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ইমাম সাহেব। তাদের জাতীয় বেতন স্কেলের মত একটি বেতন কাঠামো থাকা প্রয়োজন বা মসজিদের শ্রেণি বিবেচনা করে জাতীয় বেতনের যে কোন একটি ধাপে রাখা যেতে পারে বলে ইমাম সাহেবগণ দাবি করেন। তাদের সুখ-দুঃখ সকলের বিবেচনা করা প্রয়োজন। মসজিগুলোতে টাকার অভাবে অনেক মসজিদে দেখা যায় প্রতি বেলা নামাজে টাকা আদায় করেন। যেটিতে সে মসজিদের নিয়মিত মুসল্লিদের কষ্ট না হলেও কোন নতুন আগন্তুকদের মনে কষ্ট হয়, দেখেতে খুবই দৃষ্টিকটু। খুৎবা পড়া ও শুনা নামাজের অংশ। কিন্তু টাকার প্রয়োজনে অনেক মসজিদে খুৎবা পড়ার সময় টাকা ওঠানো হয়। সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। নামাজ আদায় হবে না।
ইমাম সাহেবদের কল্যাণের জন্য যা প্রয়োজন। দেশের ছোট বড় সকল মসজিদগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে শ্রেণিভেদে সকল ইমামগণের বেতন কাঠামো প্রস্তুত করা অপরিহার্য। সেটি করা হলে ইমাম সাহেবদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে, তাঁরা চিন্তামূক্ত হবে। তাঁরা যে কোন অন্যায় কাজ করা হতে বিরত থাকবেন। ইমাম সাহেবগণ সম্মানিত হবেন। তাদের সংসারে শান্তি আসবে। মুসলিম সমাজ আধুনিক ও উন্নত হবে।
লেখক—পুলিশ কর্মকর্তা
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।