মাইনী-কাচালং নদীর পাড়ের আখের কদর দেশজুড়ে

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির ওপর দিয়ে কাপ্তাই হ্রদের অববাহিকায় প্রবাহিত হয়েছে মাইনী ও কাচালং নদী। জেলার লংগদুস্থ নদীগুলোর দুই পাড়ে রয়েছে প্রচুর সমতল ভূমি। জেলায় সব চেয়ে বেশি আখ চাষ হয় এ নদীর দু’ধারে সমতল ভূমিতে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা বা জলাবদ্ধতা নেই বলে এখানকার আখের মিষ্টতা বেশি হয়। আর তাই লংগদু থেকে ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয় এসব আখ।

উপজেলা কৃষি অফিস তথ্যমতে, এ বছর লংগদুতে ২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫ হেক্টর বেশি। এই বছর প্রায় ৮শ মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। উপজেলায় আখ চাষের সঙ্গে ৭০টি পরিবার জড়িত রয়েছে এবং প্রতি পিস আখ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়। উপজেলার বগাচতর ও আটারকছড়া ইউনিয়নে আখ চাষ বেশি হয় বলেও জানা গেছে।

জানা গেছে, আখ চাষে সফল লংগদুর কৃষকরা। দিনে দিনে বাড়ছে পাহাড়ি জমিতে আখ চাষ। আখের ফলন ভালো এবং ধান ও অন্যান্য ফসলের আবাদে খরচ বেশি হওয়ায় নতুন করে আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের বাজার টিলা এলাকার কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে আখ চাষে লাভ বেশি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় খরচের দ্বিগুণ লাভ হয়। তাই আখ চাষ করি।

তিনি আরও জানান, ৬০ শতাংশ জমিতে এক বছর আগে আখের চারা রোপন করেন। তার ক্ষেতে মাটি সংস্কার, সেঁচের পানি দেয়া, ঔষধ পত্র সহ প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একবার বিক্রি করে খরচের টাকা তুলে ফেলেছেন। বর্তমানে তার ক্ষেতে যে পরিমান আখ হয়েছে তা বিক্রি করলে প্রায় ৫ লাখ বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তার এই আখ চাষের সফলতা এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আশপাশের কৃষকরা প্রায়ই এসে তার ক্ষেতের আখ চাষের নিয়ম জেনে যাচ্ছেন।

লংগদু উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী জানান, উপজেলার উৎপন্ন আখগুলো বাংলাদেশে সব চাইতে আকর্ষণী, এখানকার আখগুলো উজ্জ্বল রং লম্বা বেশি সেজন্য ঢাকার বাজারে এইগুলোর চাহিদা ও বেশি।

তিনি বলেন, আখের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে ‘রং বিলাশ’ জাতের আখ সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় এবং দামও বেশি পাওয়া যায়। পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত আখ চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী, তবে গুড় উৎপাদনে কাজে ও ব্যবহার হচ্ছে। কৃষকদের আখের সাথে সাথি ফসল উৎপাদন করতে পারেন। ফলে এখানকার কৃষকেরা আখ চাষে আগ্রহী।

উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আখ একটি উপকারী ফল। আখের রসে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম থাকে। আখের রস শরীরের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করা সহ কিডনি সুস্থ্য রাখে। এছাড়াও গ্রীস্মের দাবহাহে শরীরে জলের অভাব পূরন করে। আখ চাষে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি কৃষকেদের আখ চাষে আগ্রহী হতে আহ্বান করেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।