মাদকাসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধি, সর্বগ্রাসী মরণনেশা। এ নেশার কারণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত দেশের লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে যুবসমাজ। মাদকের নীল দংশনে তরুণ সমাজ আজ বিপথগামী, বিপন্ন। এর বিষবাষ্প দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। মাদকের বিষাক্ত ছোবল গ্রাস করে চলেছে নতুন প্রজন্মকে। এ থেকে রক্ষা পায়নি রাঙামাটির লংগদু উপজেলাও!
লংগদুতে এখন হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। উপজেলা ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদকের ভয়ংকর জাল। গাঁজা এবং মদ লংগদুতে অনেক আগে থেকে অহরহ মিললেও সম্প্রতি হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবাসহ বেশ কিছু উচ্চমূল্য জীবননাশক মাদকদ্রব্য। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মাদক ব্যবসার ছোট-বড় সিন্ডিকেট উপজেলা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠায় সীমান্ত হয়ে আসা ইয়াবা সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে উপজেলার তরুণ, যুবসমাজ সহ স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। তবে মাদক সেবনে সাধারণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও বেশ এগিয়ে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে উপজেলার কোনো যুবক ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে যেন মাদকের ভয়াল থাবা গ্রাস করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অভিভাবকরা।
উপজেলার আলতাফ মার্কেট সংলগ্ন আম বাগানে, লংগদু সরকারি কলেজ শহীদ মিনারে, মাইনীমূখ বনশ্রী বিশ্রামাগার এলাকায়, গাঁথাছড়া সেতুতে, জারুল বাগান নৌঘাট, গুলশাখালীর চৌমুহনী বাজার সংলগ্ন মাঠ, বগাচতরের চৌরাস্তা এলাকা ও গাউসপুরের লোহাকাঠ বাগান মাদকের স্পট হিসেবে ইতোমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছে। এসব স্পটে সন্ধ্যার পর থেকেই বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে দেদারছে চলছে মাদকের বেচাকেনা। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন দোকানেও মাদকদ্রব্য পাওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদি বিক্রির সাইনবোর্ডের আড়ালে মাদকদ্রব্য বিক্রি করছেন কয়েকজন দোকানী। দোকানে এসে বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে মাদকের নাম ও পরিমাণ জানিয়ে টাকা দেয়। কিছুক্ষণ পর দোকানী তার মাদকের ভার হতে বিশেষ পদ্ধতিতে খরিদ্দারের হাতে চাহিদামত মাদকদ্রব্য তুলে দেয়।
এলাকায় মাদক সরবরাহ করেন বিভিন্ন বয়সী স্থানীয় মোটরসাইকেল চালক সহ অনেক যুবক। তারা গাঁজা, মদ ও ইয়াবা বিক্রির মাধ্যমে এই লাইনে ব্যবসা শুরু করলেও এখন তা ছড়িয়েছে বিভিন্ন দিকে। এসবের দায়িত্ব দিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন ছদ্মবেশী মোটরসাইকেল চালককে ও কিছু এলাকার বেশ কয়েকজন যুবক। তাদের অনেকেই দলীয় পদ পদবি ব্যবহার করে গা ডাকা দিয়ে আছেন বলেও সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রে আরও জানা যায়, এতদিন লংগদুতে মাদকব্যবসা মূলত মদ, গাঁজার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারত হতে অবাধে আসছে হেরোইন, ইয়াবা ও ভায়াগ্রা নাম মাদক।বিশেষ করে রাঙামাটি থেকে নৌপথে লঞ্চযুগে ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে লংগদু-মাইনী স্থলপথে এবং বাঘাইছড়ি থেকে উপজেলার কালাপাকুজ্জ্যা এলাকায় হয়ে মাদক আসছে বলে জানা গেছে।
শুধু সমাজের তরুণ প্রজন্ম বা যুবকরাই নয়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীও মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। উপজেলার এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শখের বসে বন্ধুদের সাথে সিগারেট টেস্ট করতে গিয়ে এবং আড্ডার আসর জমাতে প্রথমে সিগারেট পরে গাঁজা সেবন করেন। তিনি ইয়াবা ট্যাবলেটও খেয়েছেন বলে জানান। তারপর কখন যে আসক্ত হয়ে পড়েছেন তা তিনি বুঝতেই পারেননি। তিনি সহ অনেক বন্ধু অভ্যাস ছাড়তে চান কিন্তু পারছেন না।
সুশীল সমাজ ও শিক্ষাবিদগণ বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীরা উপজেলা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক বিক্রি করে থাকে। অনেকে শখের বসে মাদকগ্রহণ করতে গিয়ে একেবারে আসক্ত হয়ে পড়ে। এ থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তবে মাইনীমূখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল বলেন, ‘পূর্বের যেকোনও সময়ের চাইতে এখন মাইনী বাজার সহ অন্যত্র মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা অনেক কম। উপজেলা প্রশাসন, লংগদু সেনা জোন ও লংগদু থানা সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মাদক ব্যবসা নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে।
লংগদু থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইকবাল উদ্দিন বলেন, উপজেলায় মাদকের ব্যবসা বন্ধে আমরা বদ্ধপরিকর। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, এতে কোনো আপোষ নয়। এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন বিটের দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছি। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হয়েছে। বর্তমানেও আমরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রেখেছি। প্রয়োজনে বিশেষ কিছু এলাকায় নজরদারি আরো বাড়ানো হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।