মিরসরাইয়ে বাজার ইজারার কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব নিয়ে নয়-ছয়

সরকারের রাজস্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে বড় বাজার মিরসরাইয়ের মিঠাছরা। এখান থেকে প্রতি বছর সরকার ২ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আয় করে। অথচ অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর এবং ইজারাপ্রাপ্ত সিন্ডিকেট সরকারের রাজস্ব নিয়ে করছে নয়-ছয়। ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রেও উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ১৪৩০ বাংলা সালে মিঠাছরা বাজার ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। যার ভিত্তিমূল্য ছিলো ১ কোটি ৪১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪ টাকা। উল্লেখিত বছরে সর্বোচ্চ দর ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা (ভ্যাট-আয়করসহ) হাকিয়ে ইজারা লাভ করেন নজরুল ইসলাম গং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ওইসময় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর হাকিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হন মো. সাইফুল্লাহ্।

মো. সাইফুল্লাহ্ অভিযোগ করেন, সর্বোচ্চ দরদাতা নজরুল ইসলাম গং ইজারা পাওয়ার পর সাত কর্মদিবসের মধ্যে ইজারা মূল্য, ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। সরকার প্রদত্ত হাট-বাজার ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম দরদাতা ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারা লাভ করার কথা। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করেনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৭ কর্মদিবস তো দূরে থাক ইজারা প্রদানের পর ১২০ কার্যদিবসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও নজরুল ইসলাম গং বাজারের হাসিল আদায় করছে। অথচ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সাথে কথা বললে তারা জানায় চলতি অর্থ বছরের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। যদি ইজারা বাতিল হয় তাহলে বাতিলকৃত ইজারাদার সিন্ডিকেট কি করে হাসিল আদায় করে? এটা আমার প্রশ্ন।

মো. সাইফুল্লাহর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত রবিবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিন মিঠাছরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের হাসিল আদায়ে (খাস কলেকশন) নিয়োজিত তহসিলদার ইমরুল কায়েস এবং তার কোন লোকজনকে পাওয়া যায়নি। বরং হাঁস-মুরগি বাজারে হাসিল আদায় করছে কিশোর চন্দ্র দে নামের এক ব্যক্তি।

তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা রতন চন্দ্র দে এবং করিম নামের দুই ব্যক্তি মিলে ১১ লাখ টাকা মূল্যে বাজার সাব ইজারা নেয় ইজারাদার নজরুল ইসলাম থেকে।
এরপর আদর্শ বাজার (কাঁচা বাজার) এলাকায় গিয়ে দোকানিদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, সরকারের কোন লোক হাসিল আদায় করে না। তারা আগের ইজারাদারকেই হাসিল দেয়।

হাসিল উত্তোলন কে করে জানতে চাইলে তারা জানান, মুন্সি নামের এক ব্যক্তি আদর্শ বাজার সাব ইজারা নিয়েছে। ওই ব্যক্তিই এ বাজারে হাসিল আদায় করেন।

এরপর বাজারের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (পুরাতন) এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে যানবাহন থেকে হাসিল আদায় করছে তারেক নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রতি গাড়ি থেকে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। এ সময় তারেক বলেন, মহাসড়কের এ অংশ রাসেল নামের এক ব্যক্তি ইজারাদার নজরুল থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা দিয়ে সাব ইজারা নিয়েছেন। আমি দৈনিক বেতনে রাসেলের হয়ে হাসিল আদায় করি।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্তৃক ইজারা বাতিলের পরও নজরুল ইসলাম গং এখানকার গরু-ছাগলের বাজার থেকে হাসিল আদায় করছেন এমন প্রমাণ প্রতিবেদকের সংরক্ষণে রয়েছে।

জানতে চাইলে ইজারাদার নজরুল ইসলাম ইজারা বাতিলের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে বাতিলের পরেও কি করে তিনি বাজারে হাসিল আদায় করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো কাগজ-পত্রের মাধ্যমে করছি। সাব ইজারা দেয়ার বৈধতা প্রসঙ্গে নজরুল বলেন, এটা বৈধ। মহাসড়কের যানবাহন থেকে টোল আদায়ের কথা স্বীকার করে নজরুল বলেন, এটাও বৈধ।

এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রণীত ইজারা নীতিমালার ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নজরুল ইসলামের ইজারা ক্ষমতা বাতিল করলেও একই অনুচ্ছেদে বর্ণিত আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া একই নীতিমালায় হাট-বাজার ইজারা প্রাপ্ত ব্যক্তি কাউকে বাজার সাব ইজারা দিতে পারবে না বলে উল্লেখ থাকলেও এখানে কথিত ইজারাদার নজরুল ইসলাম বলছেন, এটা বৈধ। আবার মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত ইজারা শর্তে মহাসড়কের যানবাহন থেকে টোল আদায় অবৈধ হলেও কথিত ইজারাদার নজরুল টোল আদায় করে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, ইজারা প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রাজস্বে অর্থ জমা না দেয়ায় নজরুল ইসলামের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। খাস কালেকশনের জন্য তহসিলদারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

খাস কালেকশনে দায়িত্বে নিয়োজিত মিরসরাই সদর তহসলি অফিসের তহসিলদার মো. ইমরুল কায়েস বলেন, ইজারা বাতিল হয়নি, সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

এমতাবস্থায় আপনি কালেকশন করেন কি না বা আপনার নিয়োজিত লোকবল অর্থ কালেকশন করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমাকে সাময়িক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখনো আগের ইজারাদার এগুলো কালেকশন করে প্রতি সপ্তাহে সরকারি কোষাগারে আমার মাধ্যমে জমা দেয়া হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।