মিরসরাই থেকে আটক মনাকে ছাড়লো র‌্যাব

মিরসরাইয়ে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বসাকে কেন্দ্র করে সিভিল ড্রেসে থাকা র‌্যাব সদস্যদের সাথে স্থানীয় যুবকদের হাতাহাতির ঘটনায় আটক হওয়া তৌহিদুল ইসলাম মনাকে ছেড়ে দিয়ে দিয়েছে র‌্যাব। স্থানীয়দের দাবী র‌্যাব সদস্যদের দোকানে বসা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হলেও র‌্যাব বলছে গাঁজা আটকের ঘটনায় সাক্ষ্য দেওয়া নিয়ে ঝামেলা শুরু।

শুক্রবার (১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা সদরের থানা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে আল নূর ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর মনাকে আটক করে নিয়ে যায় র‌্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের সদস্যরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুর ১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী অংশের মিরসরাই থানা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের আল নূর ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে সাদা একটি মাইক্রো হাইচ দাঁড়ায়। এসময় মাইক্রো হাইচ থেকে সিভিল ড্রেসে থাকা ৪-৫ জনের একটি দল নেমে দোকানের সামনে থাকা চেয়ার পেছনে ঠেলে পথ আগলিয়ে বসে। এসময় দোকানদার মো. আলমগীর তাদের পথ ছেড়ে বসতে বললে তারা উদ্ধত হয়ে উঠেন।

পরবর্তীতে তারা নিজেদের র‌্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে দোকানদার আলমগীরের পূর্ণ ঠিকানা জানতে চায়। এসময় তিনি ঠিকানা বলার পর র‌্যাব সদস্যরা তা লিপিবদ্ধ করেন। পরে দোকানের ভেতর বসে থাকা আরো ১০-১২ জন যুবকের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম মনার ঠিকানাও তারা জানতে চায়। মনা নাম ও পরিচয় দিতে অস্বীকার করায় র‌্যাব সদস্যরা তাকে ধরে চড় থাপ্পড় দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে তাকে দোকানের ভেতর থেকে বের করে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন, সাবেক ওসি মুজিবুর রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) ওলিউর রহমান ও উপ-পুলিশ পরিদর্শক খাইরুলের চোখে পড়ে। অজ্ঞাত লোকবল দ্বারা স্থানীয় যুবক তৌহিদুল ইসলাম মনাকে মারধর করে জোরপূর্বক হাইচ গাড়িতে তোলার সময় স্থানীয়া প্রতিরোধ করতে গেলে করলে র‌্যাব, পুলিশ ও উপস্থিতিরি মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে।

তবে ঘটনা নিয়ন্ত্রনের বাইরে যাওয়ার আগেই তৌহিদুল ইসলাম মনাকে আটককারীরা নিজেদের র‌্যাব বলে পরিচয় দেয় এবং পুলিশকে র‌্যাবের প্লেকার্ড ও পোশাক (কালো কোটি) প্রদর্শন করেন। এতে পুলিশ ও র‌্যাবের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়। পরবর্তীতে র‌্যাব সদস্যরা তৌহিদুল ইসলাম মনাকে আটক করে নিয়ে যান।

মিরসরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওলিউর রহমান জানান, ঘটনার সময় আমি পেছনে ছিলাম। আমরা মসজিদে যাওয়ার সময় দেখি এক যুবককে কিছু লোক টেনে হিঁছড়ে মাইক্রোতে তোলার চেষ্টা করছে। ওই যুবককে রক্ষা করতে ওসি স্যারসহ আমাদের পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা করলে তাদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তাদের র‌্যাব পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা মনাকে আইনের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।

আল নূর ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, স্থানীয় যুবক তৌহিদুল ইসলাম মনা তার নাম পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তাকে এভাবে মারধর করে, অত্যাচার করে তুলে নেওয়া একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হবে, র‌্যাবের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে।

র‌্যাব-৭ এর উপ-পরিচালক ও কোম্পানী অধিনায়ক আব্দুল্লাহ্ আল জাবের ইমরান বলেন, শুক্রবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই সদরে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ একজনকে আটক করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিতির স্বাক্ষী নেওয়ার জন্য আল নূর ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গেলে দোকানের ভেতর বসে থাকা তৌহিদুল ইসলাম মনা সবাইকে স্বাক্ষী দিতে নিষেধ করেন। আমরা র‌্যাব পরিচয় দেওয়ার পরও সে উশৃঙ্খল আচরণ করে। যা রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দেওয়ার শামিল। তাই তাকে আটক করা হয়।

তিনি আরো বলেন, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ও পূর্বে কোন খারাপ কাজ বা মামলার রেকর্ড না থাকায় এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দিবে না শর্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তৌহিদুল ইসলাম মনাকে মুচলেকা নিয়ে রাত ৮টায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।