মৃত্যুর ‘নানান রঙ’—ময়নাতদন্তে কাঁপে চিকিৎসকের কোমল হৃদয়

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান। সরকারি দায়িত্বের কারণে গত ৫ বছরের অধিক সময় এই হাসপাতালের ইমারজেন্সির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে হাজারের বেশী ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে হয়েছে তাঁকে। হাজারো ঘটনার হাজারো গল্প থেকে কয়েকটা নিয়ে তিনি তাঁর কষ্টের কথা ‘কিশোরীর আত্নহনন, এক পোটলা ইয়াবা ও বিবিধ!’ শিরোনামে লিখেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

হচ্ছে বিগত পাঁচ বছরেরও বেশী সময় ধরে। অনিন্দ্য সুন্দর জীবনকে যে কত কষ্ট, কসরত, বিদঘুটে, নির্মমতা ও পাশবিক উপায়ে মানুষ শেষ করে দিচ্ছে তা এই লাশঘরে না এলে বুঝা যেত না।

১৫ বছরের এক কিশোরীর প্রেম ঘটিত বিষয়ে আত্মহনন নিয়ে তিনি লিখেছেন—‘১৫ বছরের কিশোরী, পড়াশোনা, প্রেম ইত্যাদি নিয়ে বকাবকি করায় মা—বাবার সাথে অভিমান করে গলায় ওড়না প্যাঁচিয়ে আত্নহত্যার পথ বেঁচে নেয়!
কিছুই কী ছিলনা এই জগতে বেঁচে থাকার সুন্দরভাবে?’

রাজবাড়ী জেলা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে এসে ইয়াবা পাচারে যুক্ত হয়ে নাড়িভুড়ি ফেটে মারা যাওয়া পর্যটক নিয়ে ডা. আশিক লিখেছেন—‘রাজবাড়ী হতে কক্সবাজার বেড়াতে আসা যুবক যাওয়ার সময় নিজের পেটে পুরে নেয় ইয়াবার পোটলা, বিশেষ কায়দায়। লাল সেই বিষাক্ত ট্যাবলেট প্যাকেট গলে বের হয়ে পেটের নাড়িভুড়িসহ ফাটিয়ে দেয়, কী বীভৎস ও করুন মৃত্যু সেই যুবকের! আহা! কীসের মোহে মানুষ জড়াচ্ছে এহেন মাদকতায়? একবার ও কী মনে ভাসেনি সেই ছোট্ট মেয়েটার কথা যে বহুদূরে অপেক্ষায় ছিল বাবা আসবে বলে?’

কক্সবাজারের এক যুবক, ঈদের পরই ঠিক ছিল তার বিয়ে। দুনিয়ার অনেক কিছুর দেখার-পাওয়ার আগেই প্রতিপক্ষের হামলা তিনি মারা যান। ডাক্তার আশিকের ভাষায়—‘প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে মাথায় আঘাত নিয়ে মৃত্যু! টগবগে, বলিষ্ঠ যুবা- কত আর ঠেকাতে পারে? কতজনকে আটকানো যায়? কী পেয়েছে সে ধরাধমে? বিয়ের কথা হচ্ছিল ঈদের পরই!

নিষ্ঠুর প্রতিপক্ষ শুধু জবাই করেই এক যুবককে ক্ষ্যান্ত হয়নি। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বুকের বাম পাশে করেছে গুলিও। ডাক্তার আশিক লিখেন—
‘গলা কেটে জবাই করে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বুকের বাঁ পাশে গুলি করেছে একেবারে কাছ হতে! কারবালা দেখিনি কিন্তু সেই ভয়ানক ও নিষ্ঠুরতম “এজিদ” যে আজো আছে তা টের পাচ্ছি! ৩২ বছরের তাজা প্রাণের নিথর দেহ—শীতলতা—নির্লিপ্ততা আর কত?’

কোলের শিশুর কথা না ভেবে স্বামীর বাড়িতে অভিমানী গৃহবধুর বিষপানে আত্মহনন নিয়ে তিনি লিখেছেন—‘স্বামীর বাড়িতে অভিমান করে বিষপান। তিনদিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ঠাই হয় লাশঘরে।
ছোট ছেলেটা নানীর কোলে উদাস দৃষ্টি ও আকুলতা নিয়ে তাকিয়ে আছে, চোখের পানি ও শুকিয়ে গেছে! কার মমতায় বেড়ে উঠবে এই শিশু?’

সব শেষে এই চিকিৎসক লিখেন—আর কত এসব অপমৃত্যু, এসব আত্নহনন? জীবনের রং, রুপ ও বেঁচে থাকার আনন্দ উপভোগের চেয়ে কেন মানুষ নিজেকে “হারায়”? উত্তর জানা আছে কারো?

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।