নিরাপদ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চট্টগ্রাম নগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে ‘মিট মাই মেয়র’ শিরোনামে শিশু ও যুব সংলাপ আয়োজিত হয়েছে।
শনিবার ( ২৩ এপ্রিল) সেভ দ্য চিলড্রেনের সহায়তায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু হলে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা ও চট্টগ্রামের যুব সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স অফ ইয়ুথ (বে)।
ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের শিশু ও যুবরা ভবিষ্যতের চট্টগ্রাম নগর নিয়ে তাদের প্রত্যাশা এবং প্রস্তাবনা নিয়ে নগরপিতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে। মেয়রের সাথে সরাসরি কথা বলতে অনুষ্ঠানে নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন যুব সংগঠন থেকে প্রায় ১০০ শিশু-কিশোর ও যুব প্রতিনিধিরা অংশ নেয়।
চট্টগ্রাম শহরের প্রধানতম সমস্যা জলাবদ্ধতায় শিশু ও যুবরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে এই অবস্থার স্থায়ী নিরসনে নগরীর অভিভাবক হিসেবে মেয়রের ভূমিকা জানতে চায় শিশু ও যুবরা। জবাবে মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত কয়েকদিন ধরেই আসন্ন বর্ষাকে মাথায় রেখে নগরীর অধিকাংশ নালা ও খাল পরিষ্কার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পে সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধুমাত্র নগর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ দিয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জনগনের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা।
চট্টগ্রাম শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। যে কয়েকটি বছরের বেশকিছু সময় মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেগুলো দখল হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেক ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ নেই বললেই চলে উল্লেখ করে শিশু ও যুব প্রতিনিধিরা মেয়রকে প্রশ্ন করেন চট্টগ্রামে শিশু ও যুবদের খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান নিয়ে মেয়রের কোন ভাবনা আছে কিনা?
এ প্রসঙ্গে মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শিশু ও যুবদের মোবাইল আসক্তি কমাতে ও সুস্থ বিনোদনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরিত্যক্ত মাঠকে সংস্কার করছে। পর্যায়ক্রমে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডেই শিশুদের জন্য খেলার মাঠ করা হবে। আমার এই মেয়াদে সব ওয়ার্ডে ব্যবস্থা করা না গেলেও ভবিষ্যতে যেন চট্টগ্রামে সব ওয়ার্ডে শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ করা হয় সে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া শিশু ও যুবদের জন্য উন্মুক্ত পার্ক করার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বরাবর ২৪ একর জায়গার জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রামের উন্মুক্ত স্থান সিআরবি রক্ষা নিয়েও মেয়রকে প্রশ্ন করেন শিশু ও যুবরা। জবাবে মেয়র বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের ফুসফুস। সিআরবিকে নিয়ে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্তই নিবে।
অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ বেশ কিছু সেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি ও নাগরিকদের পরিষেবার জন্য আইসিটি ভিত্তিক সমাধান ব্যবস্থা করা জরুরি উল্লেখ করে সিটি কর্পোরেশনের সেবাগুলোকে ডিজিটাল করার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামকে আধুনিক ও উন্নত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে আমি বদ্ধপরিকর। চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের প্রসঙ্গ টানাতে এক সময় আমার উপর অনেকেই হেসেছিলেন, অথচ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে আমাদের সেবাসমূহকে ডিজিটাল করার চেষ্টা করে চলেছি।
প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে সমাপনি বক্তব্য দেন সেভ দ্য চিলড্রেন এর পরিচালক (হিউম্যানিটেরিয়ান) মোস্তাক হোসাইন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইপসার প্রয়াস-২ প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার সৈয়দ মোহন উদ্দিন ও সেভ দ্য চিলড্রেনের ম্যানেজার (আরবান রিজালিয়েন্স) সায়মন রহমান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইপসার প্রয়াস-২ প্রকল্প সমন্বয়ক সানজিদা আক্তার, পূর্বার সভাপতি সনাতন চক্রবর্ত্তী বিজয়, পজিটিভ থিংকারসের সভাপতি জিকু চৌধুরী, রোটারেক্ট ক্লাব অব চট্টগ্রামের ট্রেজারার আরমান হোসাইন, বিডি ক্লিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. শাহাদাত হোসেন কায়েস, ইউনাইটেড নেশনস ভলান্টিয়ার লিমন শেখ, প্রগতিশীল যুব সংঘের সভাপতি হেফাজুর রশিদ, এসডিজি ইয়ুথ ফোরামের সম্পাদক মিনহাজুর রহমান শিহাব, শতদল যুব সংঘের সভাপতি সুমাইয়া আক্তার বৈশাখী, ইয়ুথ নেটের সমন্বয়ক মো. নাহিদ হোসেন, টিম চিটাগং এর সভাপতি আবরার শাহরিয়ার আকিব, ইয়ুথ ভয়েস অব চট্টগ্রামে বাবলু বড়ুয়া, আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার ও প্রয়াস-২ প্রকল্পের শিশু সাংবাদিক প্রমুখ।
এমএফ
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।