যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর গোপন নথি ফাঁস, জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগজনক

ফাঁস হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় নথি। পেন্টাগন স্বীকার করেছে যে, এই নথি ফাঁস জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের। মার্কিন কর্মকর্তারা এখন খোঁজার চেষ্টা করছেন, কোন দেশ বা ব্যক্তি এই তথ্য ফাঁস করেছে। পেন্টাগনের মধ্যেকার কেউ এই কাজের সঙ্গে জড়িত বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। এসব নথিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের কাউন্টার এটাক, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা এবং ইসরাইলের গোয়েন্দা সংক্রান্ত প্রচুর তথ্য রয়েছে।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ওই ফাঁস হওয়া নথির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আগামী মে মাসের মধ্যেই ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়বে। এসব ব্যবস্থায় যে এন্টি-এয়ার মিসাইল ব্যবহার করা হয় তা ফুরিয়ে আসছে। ইউক্রেনের আকাশে রাশিয়ার একচেটিয়া আধিপত্যের বিষয়টিও এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। কিয়েভ গত কয়েক মাস ধরেই পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়ে আসছে।

পেন্টাগনের হিসাবে, ইউক্রেন প্রতি মাসে ৬৯টি করে বাক মিসাইল এবং ২০০টি এস-৩০০ মিসাইল খরচ করছে। মূলত রাশিয়ার ছোঁড়া ড্রোন ও মিসাইল ধ্বংসের চেষ্টা করতে এসব মিসাইল ব্যবহার করে ইউক্রেন। এই হারে মিসাইল খরচ করতে থাকলে এই সপ্তাহের মধ্যে বাক মিসাইলের মজুদ শেষ হয়ে যাবে ইউক্রেনের। অপরদিকে এস-৩০০ মজুদ শেষ হবে ৩রা মে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক প্রতিরক্ষা সচিবের সহকারী বলেছেন, এই লিক দেশের নিরাপত্তার পক্ষে খুবই বিপজ্জনক। তাই বিষয়টি রীতিমতো চিন্তার। প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে, কী ধরনের তথ্য বাইরে এসেছে এবং কোন দেশকে তা দেয়া হয়েছে। অনেক নথি অনলাইনে পোস্ট করা হয়েছে। সেগুলির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। কিন্তু পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং জানিয়েছেন, এই তথ্যগুলি অত্যন্ত গোপন ও স্পর্শকাতর। গত কয়েকদিন ধরে টুইটার, টেলিগ্রাম, ডিসকর্ড এবং অন্য সামাজিক মাধ্যমে সমানে এই সব তথ্য ফাঁস হচ্ছে।

ওয়াশিংটন পোস্টকে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিছু নথিপত্র ঠিক নয়, কিন্তু কিছু নথি ঠিক। সেইসব সব গোপনীয় নথি হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ স্তরে পাঠানো হয়েছে। এই সব নথি রাশিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, ‘ফাঁস হওয়া তথ্য খুবই ইন্টারেস্টিং। প্রত্যেকে এখন এই সব তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করছে। রাশিয়া এই তথ্য ফাঁস করেছে কি না, তা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। কিন্তু আপনারা জানেন, যাই হোক না কেন, শেষপর্যন্ত সব দোষ রাশিয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়। এটা একটা রোগের মতো।

ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া তথ্যের ফ্যাক্ট চেক হওয়াটা জরুরি। এছাড়া এসব নথিতে দেখা গেছে, রাশিয়া ইউক্রেনের যে বিশাল ভূমি দখল করেছে তা উদ্ধারে ইউক্রেনের সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের পারফরম্যান্স এবং গোলার মজুদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হতাশ বলে মনে হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, সেনা সংখ্যা কম থাকার কারণে বসন্ত কালে রাশিয়ার হাত থেকে ভূমি উদ্ধারের ইউক্রেনীয় চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, ইউক্রেন মূলত দক্ষিণ ও পূর্বের এলাকাগুলো রাশিয়ার হাত থেকে উদ্ধার করতে চায়। তাদের উদ্দেশ্যে খেরসন ও জাপোরিশিয়া অঞ্চলে বড় কাউন্টার এটাক পরিচালনা করা। রাশিয়ার ক্রাইমিয়া পর্যন্ত দখলের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে ইউক্রেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টা থেকে খুব বেশি সফলতার আশা করে না বলে নথিতে দেখা গেছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।