যৌবন মানেই বন্ধু, আড্ডা, গান, মাস্তি নয়। মহান আল্লাহ ক্ষণিকের জন্য মানুষকে তার এই বিশেষ নিয়ামত দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা তাতে উত্তীর্ণ হবে, তারাই সফল। আর যারা তা অবহেলা করবে, তারা চিরব্যর্থ।
পবিত্র হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। …যে যুবক বেড়ে উঠেছে মহান প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)
আল্লাহর কাছে যৌবনকাল অনেক বেশি প্রিয়। সে কারণেই তিনি সব নবি-রাসুলকেই যৌবনের টগবগে বয়সে সত্য দ্বীনসহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা একমাত্র যুবক বান্দাকে জ্ঞান দান করেন। যাবতীয় কল্যাণ যৌবনেই লাভ করা সম্ভব হয়। তারপর তিনি তার দাবির পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ তাআলার বাণী তেলাওয়াত করে শোনান। আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. قَالُواْ سَمِعۡنَا فَتٗى يَذۡكُرُهُمۡ يُقَالُ لَهُۥٓ إِبۡرَٰهِيمُ
‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৬০)
২. َّحۡنُ نَقُصُّ عَلَيۡكَ نَبَأَهُم بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّهُمۡ فِتۡيَةٌ ءَامَنُواْ بِرَبِّهِمۡ وَزِدۡنَٰهُمۡ هُدٗى
‘আমরা তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমরা তাদের হেদায়েত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১৩)
যুগে যুগে সব পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুবকরাই দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেক জাতির ইতিহাসেই দেখা যায়, তাদের মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যুবকরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তেমনই এক যুবক ছিলেন ইবরাহিম (আ.), যিনি সর্বপ্রথম নিজ গোত্রের মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি, এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৬০)
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপযুক্ত সময়ে বিশেষ বিশেষ নিয়ামত দান করেন। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের ওই উপযুক্ত সময় হলো যৌবনের শেষ মুহূর্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর মুসা যখন যৌবনে পদার্পণ করল এবং পরিণত বয়স্ক হলো, তখন আমি তাকে বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান দান করলাম। আর এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ১৪)
যৌবন কখনো কখনো মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। যৌবনের তাড়নায় যুবকরা অনেক ধরনের পাপে লিপ্ত হয়ে যায়। আলকামা (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আমি আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় উসমান (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, হে আবু আবদুর রহমান, আপনার সঙ্গে আমার কথা আছে। তারা পৃথক হয়ে কথা বলেন। উসমান (রা.) বলেন, আবু আব্দুর রহমান, আমরা তোমাকে পুনরায় বিয়ে দিতে চাই, তোমার কী মত? এতে তোমার আগের কথা মনে পড়বে। অতঃপর তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের বলেছিলেন, হে যুবক সম্প্রদায়, তোমাদের কেউ সামর্থ্যবান হলে সে যেন বিয়ে করে। তা দৃষ্টি রক্ষা করবে এবং লজ্জাস্থান রক্ষা করবে। আর কেউ তা না পারলে সে যেন রোজা রাখে। কারণ তা তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৫)
যৌবনে কেউ কেউ অধিক ফ্যাশনপ্রিয় হয়। তাদের চুল, পোশাক ও বেশভূষায় থাকে উগ্রতা। কেউ কেউ নারীদের মতো কানে দুল পরে। কেউ আবার সোনার আংটি, চেইন, ব্রেসলেট ইত্যাদিও পরে থাকে। রাসুল (সা.) এ ধরনের কাজ পছন্দ করতেন না। একবার রাসুল (সা.) হজরত খাব্বাবের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন, তাঁর হাতে একটি সোনার আংটি। তিনি বললেন, এখনো কি এই আংটি খুলে ফেলার সময় হয়নি? খাব্বাব (রা.) বললেন, আজকের পর আর এটি আমার হাতে দেখতে পাবেন না। অতঃপর তিনি আংটিটি ফেলে দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৩৯১)
যৌবনকালে জীবন সুন্দর করার পরামর্শ দিয়ে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আবু হুরায়রা, আল্লাহভীরু হও অর্থাৎ সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করো, তুমি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ইবাদতগুজার হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকে সন্তুষ্ট হও, সবচেয়ে ধনী হবে। তুমি নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য যা পছন্দ করো তা অন্য মুসলিম ও মুমিনের জন্য পছন্দ করো। নিজের জন্য যা অপছন্দ করো তা অন্যের জন্য অপছন্দ করো। তাহলে তুমি পরিপূর্ণ মুমিন বলে গণ্য হবে। পড়শীর সঙ্গে সুন্দরভাবে থাকো, তুমি পরিপূর্ণ মুসলিম বলে গণ্য হবে। বেশি হাসা পরিহার করো। কারণ বেশি হাসা অন্তর মৃত হওয়ার মতো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৫)
মূলকথা হলো, যৌবনকাল মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত। এ সময় মানুষের ইবাদতের শক্তি ও সুস্থতা দুটিই থাকে। এ সময় একজন মানুষ যতটা শুদ্ধতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে আমল করতে পারে, বৃদ্ধ হয়ে গেলে তা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই এই মহামূল্যবান নিয়ামত কোনোভাবেই অবহেলায় কাটানো উচিত নয়। কারণ কিয়ামতের দিন যৌবনকালের সময়ের হিসাব নেওয়া হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)
সুতরাং বর্তমান সময়ে যুব সমাজের দুরবস্থা ও নৈতিক অধঃপতনের সময় কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে জবাবদিহিতামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা খুবই জরুরি। সব অন্যয় ও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকাও আবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব যুবক-যবতীকে সময়ের উম্মাদনার স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন গড়ে তোলা তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা যুবকদের প্রতি বিশেষ রহমত নাজিল করুন। আমিন।
এমএফ
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।