যুবলীগ কর্মী আকাশ হত্যা—নেপথ্যে ভাই হত্যার বদলা, মাদক-গাছ পাচারের দ্বন্দ্ব

0

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের শহিদুল ইসলাম আকাশ এবং মামুন —এক সময় দুইজন ছিলেন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসাথে চলাফেরার পাশাপাশি দুইজনে করতেন মাদক ও গাছ ব্যবসা। ছিলেন একই রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায়। তবে এসব এখন কেবলই গল্পকথা। গড়িয়েছে সময়, ঘটেছে অনেক কিছু। পাল্টে গেছে তাদের সম্পর্কের নাম। বন্ধু আকাশকে খুন করে মামুনের ঠিকানা এখন জেল হাজতে, লোকমুখে তার পরিচয় খুনি।

দ্বন্দ্বের শুরু ২০১৫ সালে। মাদক ও গাছ পাচারের অর্থ নিয়ে দুইজনের মধ্যে লেগে যায় তুমুল গোন্ডগোল। মুহূর্তে বদলে যায় সম্পর্ক। রাগ-ক্ষোভে মামুন চেষ্টা করে আকাশকে হত্যার। সে যাত্রায় দীর্ঘদিন আকাশকে হাসপাতালে কাটাতে হলেও নিভে যায়নি জীবনপ্রদীপ। এরপর আকাশের মামলায় বেশ কিছুদিন হাজতে থাকতে হয় মামুনকে। আর মামুন কারাগার থেকে বের হলে তাদরে ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসে। এরপর তাদের মধ্যে চলে সংঘাত-বিরোধ।

২০১৬ সালের দিকে খুন হয় আকাশকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত সাদ্দাম। সে মামলায় বেশ কিছুদিন জেলে থাকতে হয় আকাশকে। এছাড়া বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মামলায় জেলে যেতে হয় মামুনকেও। আর মামুন এসবের পেছনে আকাশ ও তার গ্রুপ জড়িত থাকাকে সন্দেহ করে। তখন মামুন তার পূর্ববন্ধু আকাশের গ্রুপ থেকে বের হয়ে আরেকটি গ্রুপে চলে আসে। তখন পূর্বে মামুনের সাথে থাকা মোতালেব নামে একজন আকাশের সাথে এসে এক হয় চালাতে শুরু করে মাদক ও গাছ পাচারের কাজ।

আকাশের যখন সাপে-নেউলে সম্পর্ক মামুনের তখনই আকাশের আপন চাচাতো বোনের প্রেমে পড়ে মামুন। না বালিকা সেই মেয়েকে পরিবারের অমতে ২০১৯ সালে বিয়ে করে মামুন। আর তখন মেয়েটির পরিবার মামুন ও তার ভাই ইকবালের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। আর সে মামলায় জেলে যায় মামুন ও তার ভাই।

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলায় জেলে যাওয়ার আগে আরেকটি অস্ত্র মামলায় জেলে থাকাকালীন মামুনের ছোট ভাই আফজাল খুন হন। খুনে দায়ী করা হয় আকাশের গ্রুপ। হত্যাচেষ্টা চালানো হয় মামুনের আরেক ভাই ইকবালের ওপরও। যার এক হাতের ৩টি আঙ্গুল নেই, কাটা আরেক হাতের কব্জি পর্যন্ত। এছাড়া পুরো শরীরে ভায়াবহ দাগে ভরা। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করছে পিবিআই।

আর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দায়ের করা মামলায় যখন মামুন জেলে ছিলো তখন সে চিন্তা করে আকাশ হয়তো তাকেও টিকতে দিবে না। আর তাই জেলে বসেই ছক আঁকে একসময়ের বন্ধু শহিদুল ইসলাম আকাশকে হত্যার।

যুবলীগ কর্মী আকাশ হত্যা—নেপথ্যে ভাই হত্যার বদলা, মাদক-গাছ পাচারের দ্বন্দ্ব 1

মামুন গত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পেয়ে মামুন তার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তার সহযোগী মোতালেব, রাজু, নেজাম, হামিদ ও মুকেশসহ হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী গত ১৯ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় যুবলীগ কর্মী আকাশকে কুপিয়ে হত্যা করেন। মূলত ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে জামিনে বের হয়ে হিঙ্গুলী ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী শহীদুল ইসলাম আকাশকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে —মামুনের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে র‌্যাব।

এ ঘটনায় শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে প্রধান আসামি মামুনকে (২৮) চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাত ৮টায় তার দুই সহযোগীকে চাঁদপুর জেলার পুরান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো— মূল আসামি মো. মামুন (২৫) ও তার দুই সহযোগী মুকেশ চন্দ্র দাস ওরফে সৌরভ দাস (২৪) ও মো. ইকবাল (২২)।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-৭এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ড ও এর পেছনের কারণ জানান। র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনে ফেনী কোম্পানী অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম, র‌্যাব-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

উপরে বর্ণিত ঘটনার বিবরণ দেওয়ার পাশাপাশি র‌্যাব অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, শহিদুল ইসলাম ওরফে আকাশকে হত্যার পরপরই আসামিরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে মূল আসামি মো. মামুন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে, নিহতের বোন নাজমা আক্তার ২১ সেপ্টেম্বর জোরারগঞ্জ থানায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো আটজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলার পাঁচ নম্বর আসামি হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।

আরও পড়ুন:
চট্টগ্রামে যুবলীগ কর্মীকে ‘কুপিয়ে’ হত্যা
থামছে না আকাশের বৃদ্ধা মায়ের কান্না
মিরসরাইয়ে যুবলীগ কর্মী হত্যায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

জীবন/ফারুক

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।