তাকিয়া—বোনের সংবর্ধনায় এসেছেন মায়ের সাথে। হাতে বোনের পাওয়া মেডেল নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু ভাবছেন। হয়তো মনে মনে চিন্তা করছেন একদিন আমিও পাবো এই মেডেল। হয়তো বা আরও বড় কিছু। দেশে নয়তো দেশের বাহিরে। বাবা-মা, ভাই-বোন আমার জন্য হাসবেন, আমার কথা বলবেন।
বুধবার (২২ মে) চট্টগ্রামের হালিশহরস্থ বড়পুলে সিটি হল কনভেনশন সেন্টারে বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের আয়োজিত এসএসসি কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গিয়ে চোখে পড়ে এই চিত্র। সকালে শুরু হয় এই আয়োজনে কৃতি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এসেছিলেন তাকিয়ার মতো আরও অনেক শিশু, সেই সাথে অভিভাবকরা।
সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ঢল নামে অনুষ্ঠানস্থলে। লাইন ধরে সারিবদ্ধভাবে একে একে প্রবেশ করতে থাকেন অনুষ্ঠানস্থলে। ধীরে ধীরে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় সংবর্ধনাস্থল।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কেউ মনোযোগ দিয়ে সামনের কথাগুলো শুনছেন, নোট করছেন। কেউ নিজের মধ্যে আড্ডা জমিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ব্যস্ত ছবি তুলতে, কেউবা আবার আনমনে তাকিয়ে নিজের স্বপ্নের সাথে মিলিয়ে নিচ্ছেন কথাগুলো।
বেশ উৎসাহ উদ্দীপনায় মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। গল্প আড্ডায় একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পিতা-মাতা কিংবা ছোট ভাই বোনকে অনেকে সাথে নিয়ে এসেছেন অনেকে। একসাথে হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর সাথে সংবর্ধিত হতে পারা বেশ উৎসাহী করেছে শিক্ষার্থীদের। যেন আজ স্বপ্নকে নতুন করে দেখার দিন, নতুন পথে চলতে শুরুর করার দিন।
অনুষ্ঠানে যেমন উচ্চশিক্ষা বিষয়ক পরামর্শ দিক নির্দেশনা দেওয়া হয় তেমনি দেশের বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানান বিষয় তুলে ধরা হয়। এছাড়া বাস্তব জীবনের নানান বিষয় তুলে ধরা হয়। অডিও-ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যের বিষয়গুলোসহ জীবনের নীতি নৈতিকতার নানা দিক।
নুসরাত জাহান সদ্য এসএসি পাশ করেছেন। ক্যামব্রিয়ানের সংর্ধনায় এসেছেন মাকে সাথে নিয়ে। তিনি বলেন, আজকের দিনটা নিয়ে অনেক উৎসাহী ছিলাম। আমরা সবাই মিলে একত্রিত হতে পেরেছি। যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে জানতে চাই তারা সবাই একসাথে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
নীলা হক নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমার জীবনে প্রথম এত বড় অনুষ্ঠানে এসেছি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে অসংখ্য শিক্ষার্থী এসেছে। খুব বেশি ভালো লাগছে। এই অনুষ্ঠান সামনের চলার পথে আরও উৎসাহী করবে।
ওসমান গণি মেয়ে ফাহমিদাকে নিয়ে এসেছের চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে। অর্চনা রানী মেয়েকে নিয়ে এসেছেন নগরীর লালখান বাজার থেকে। তারা দুজনেই বলেন, সন্তানকে আরও বড় করতে চান। উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনা করিয়ে দেশের জন্য সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। আর সন্তানের চলার পথে প্রেরণা জোগাতে নিজেরাই এসেছেন এই সংবর্ধান অনুষ্ঠানে।
এতে বক্তব্য রাখেন বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার। তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থীদের উচিত পড়াশোনায় মনযোগী হওয়ার সাথে সাথে মানবিক কাজগুলোও করা। এতে করে যেমন শিক্ষার্থীরা সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে তেমনি দেশের জন্যও অমূল্য সম্পদে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, অর্থ কুক্ষিগত করে না রেখে নিজের জন্য কিংবা অন্যের জন্য খরচ করুন। এতে করে যেমন আত্মিক শান্তি মিলবে তেমনি সমাজও দেশের উন্নয়ন হবে। আমাদের অনেকে আছি অর্থের কথা চিন্তা করে সন্তানদের ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে চাই না। এতে করে সম্ভাবনা থাকা সত্বেও অনো সন্তান পিছিয়ে পড়েন। অভিভাবকদের এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, তোমরা এখনও নবীন। সবে জীবনের চলা শুরু। আর শুরুতে যাতে কোন ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। আলসেমি করলে পিছিয়ে পড়াদের কাতারে সামিল হতে হবে তাই পরিশ্রমের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যাব না।
ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ এবং ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের পরিচালক লায়ন মাহবুব হাসান লিংকন বলেন , সারদেশে মাধ্যমিক এসএসসি এবং সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৫০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিচ্ছে বিএসবি ফাউন্ডেশন। সংবর্ধনায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীর জন্য থাকছে স্কলারশিপ, মেডেল ও সার্টিফিকেট। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ১৫টি পৃথক ভেনুতে ১৮ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত চলছে এই সংবর্ধনা। সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাসের পর দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি, ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশন প্রোগ্রামে ভর্তি, বিদেশে স্কুল-কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির তথ্য সম্পর্কে জানতে পারছেন।
প্রসঙ্গত, ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ (বিএসবি) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শান্তির জন্য শিক্ষা, আত্মনির্ভরশীলতা ও বৈশ্বিক সুযোগ- এ শ্লোগান নিয়ে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সুশিক্ষায় শিক্ষিতকরণের লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে দেশের পাঁচটি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১৫টি ক্যাম্পাসে ক্যামব্রিয়ান কলেজের পাঠদান অব্যাহত আছে।
২০১৪ সালে চট্টগ্রামে ক্যামব্রিয়ারে পথ চলা শুরু। রাজধানী ঢাকার মতো চট্টগ্রামের হালিশহরেও রয়েছে ক্যামব্রিয়ানের ডিজিটাল ক্যাম্পাস। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম ক্যামব্রিয়ান কলেজ ফলাফলের দিক থেকে এই বোর্ডের অন্যতম শীর্ষ কলেজ।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।