১৪ বছর আত্মগোপনে থাকা যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের আসামী চট্টগ্রামের আনোয়ারার মামুনুর রশীদকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মহানগরীর কোতোয়ালী ব্রীজঘাট এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে স্বামী মামুনুর রশীদ (৫০) কে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭।
শুক্রবার (২১ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মিডিয়া মো. নুরুল আবছার। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত রশীদ আনোয়ারা উপজেলার কৈখাইন এলাকার আব্দুল শুক্কুরের পুত্র।
র্যাব জানায়, বরগুনা জেলার তালতলী নিদ্রারচর এলাকার বাসিন্দা কলি আকতার ২০০২ সালের জুন মাসে চট্টগ্রামে এসে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করে আসছিল। চাকুরী করাকালীন মামুনুর রশীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং ভিকটিম তার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার তাদের বিবাহের বিষয়টি মেনে নেয়।
বিবাহের পর থেকে ভিকটিমের স্বামী মামুনুর রশীদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুক দাবী করে এসেছে। ভিকটিম কলি আক্তার এর পিতা-মাতা অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে মেয়ের সুখের আশায় সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ঘাতক স্বামীকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেয়। সে টাকা দিয়ে ঘাতক স্বামী উশৃঙ্খল জীবন যাপন করিয়া নষ্ট করে ফেলে। তাদের ঘরে একটি ৩ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। ভিকটিমের স্বামী মামুনুর রশীদ ডাকাতিসহ বিভিন্ন ফৌজদারী মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকে।
র্যাব আরও জানায়, ভিকটিমের পিতা-মাতা মেয়ের সুখের জন্য ঋণ করে ভিকটিমের স্বামী মামুনুর রশীদকে ১ বছর ৮ মাস পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত করে। জামিনে মুক্ত হয়ে কর্মহীন অবস্থায় আরো ৫০ হাজার টাকার জন্য ভিকটিম এবং তার পরিবারকে চাপ দেয়। ভিকটিমের পরিবার চাহিদাকৃত ৫০ হাজার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামী মামুনুর রশীদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা ভিকটিমকে মারধর ও নির্যাতন শুরু করে। ভিকটিম তার স্বামীকে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে প্রায়ই তার স্বামী তাকে গালাগালি, নির্যাতন এবং মেরে ফেলার হুমকি দিত।
র্যাব আরও জানায়, গত ২০০৯ সালের ২৬ মে বিকাল আনুমানিক ৩টায় ভিকটিমের মা ফোন করে ভিকটিম কলি আক্তারের খবর জানতে চাইলে ঘাতক স্বামী মামুনুর রশীদ জানায় কলি আক্তার ডায়রিয়ায় আক্তান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর ঘাতক মামুনুর রশীদ মোবাইল ফোনে ভিকটিমের মাকে জানায় তার মেয়ে ডায়রিয়া রোগে মারা গেছে এবং দাফন-কাফনও শেষ। কিন্তু এ ব্যাপারে ভিকটিমের পরিবার আশেপাশের লোকজন থেকে জানতে পারেন যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভিকটিম কলি আক্তারকে হত্যা করে এবং হত্যার আলামত গোপন করার জন্য তাড়াহুড়া করে কাউকে না জানিয়ে দাফন করে ফেলেছে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে আনোয়ারা থানায় মামুনুরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরধারি অব্যাহত রাখে র্যাব। এর ধারাবাহিকতায় তাকে বৃহস্পতিবার তাকে করা হয়।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।