রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, মোকাবেলায় তৎপর প্রশাসন

পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি। এখানে সড়কের পাশে, পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করেন অসংখ্য মানুষ। প্রায় প্রতি বছর পাহাড়ি এলাকার অসংখ্য মানুষ পাহাড় ধসে প্রাণ হারান। ২০১৭ সালে পাহাড় ধসে এই অঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১৬০ জনের বেশি মানুষ। এবারও প্রবল ভারি বর্ষণে অনেক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে পাহাড় ধসের শঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণহানি এড়াতে সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

জানা গেছে, পাহাড় ধসের ক্ষতি মোকাবেলায় তৎপরতা বেড়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের। পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাসরত লোকদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন তারা। দিনের অধিকাংশ সময় জেলা প্রশাসনের টিম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষদের সচেতন করছেন। গভীর রাত পর্যন্ত প্রশাসন এসব এলাকায় গিয়ে লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসন রাঙামাটি শহরের ২৯টি এলাকা অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শহর ও উপজেলায় মোট ১৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় রাঙামাটি শহরের বেতার ভবন, বিএম ইনিষ্টিটিউট স্কুল ও লোকনাথ মন্দির আশ্রমে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ১৬২ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, মোকাবেলায় তৎপর প্রশাসন 1

রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে ১৪৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার ৭৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ন রশিদ জানান, গত চার দিন ধরে রাঙামাটিতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আরও কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রোববার (৬ আগস্ট) সরজমিনে দেখা গেছে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বারবার ছুটে যাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। খোঁজ নিচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনদের। প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের টিম ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদে সব ধরণের নৌযান চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে সড়কের পাশ ও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন। শহরের ভেদভেদি যুব উন্নয়ন এলাকায় সড়কের পাশ ধসে যাওয়া বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে দুর্ভোগ। জেলার বরকল জুরাছড়ি বিলাইছড়ি উপজেলায় গত ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ে প্রতিবছর বৃষ্টির সময় অসংখ্য মানুষ মারা যায়। এবার প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বেশ তাগাদা দিচ্ছে। তবে অনেকেই গবাদি পশু ও নিজেদের স্থাপনা ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক না। কেউ কেউ আবার আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন অভিযোগও করছেন।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, একটি লোকও যাতে হতাহতের শিকার না হয়, একটি পরিবারও যাতে ক্ষয়ক্ষতির মুখে না পড়ে—সেজন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। সেনাবাহিনীকে সাথে কাজ করছে প্রশাসন।

তিনি আরও বলেন, সকল উপজেলায় ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের খাবারসহ সব ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কোথাও যাতে অনিয়ম না হয় সকলকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় যৌথ সমন্বয়ে কাজ করছে প্রশাসন।

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, মোকাবেলায় তৎপর প্রশাসন 2

পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, প্রতিটি উপজেলায় রেসকিউ টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও রাঙামাটি জেলা পুলিশের সকল সদস্যকে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনের সাথে থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের উদ্ধারে প্রস্তুত রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের বাহিনী। প্রস্তুত রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক টিমও। রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. দিদারুল আলম বলেন, ২০১৭ সালের কথা চিন্তা করে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যেকোন দুর্যোগ হলেই উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব হবে।

আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের শুকনো খাবার ও ভাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন।

এদিকে জেলা প্রশাসনের ৩টি টিম সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের সহযোগিতায় লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। রাতের বেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসলেও ঝুঁকি নিয়ে এখনও অনেক লোকজন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। তবে নিয়মিত মাইকিং ও নজরদরি চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।