রাঙ্গুনিয়ায় সুলতান আল নাহিয়ানের প্রকল্পে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল স্থাপনের দাবি

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী ইউনিয়নে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামে নিবন্ধিত ১১০ একরের পরিত্যক্ত জমিতে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে বেতাগী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, এই জমি ১৯৮৫ সালে মাত্র এক টাকায় শেখ জায়েদকে উপহার দেওয়া হয়েছিল এতিমখানা স্থাপনের জন্য। দীর্ঘ ৪০ বছরেও এখানে কোনো কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় জমিটি পড়ে আছে অপ্রয়োজনীয়ভাবে। অথচ এটি একটি আদর্শ হাসপাতাল প্রকল্পের জন্য সম্ভাবনাময় স্থান।

জানা গেছে, কর্ণফুলী নদী ঘেঁষা এবং কাপ্তাই মহাসড়ক লাগোয়া এই প্রজেক্টটি বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত। নদীপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরত্বে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত সুবিধাজনক। এছাড়া এখানে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য জেনারেটর, হেলিকপ্টার অবতরণের সুবিধা এবং নিরাপত্তার জন্য চারপাশে উচ্চ সীমানা প্রাচীরসহ ছয়টি গেট।

রাঙ্গুনিয়ায় সুলতান আল নাহিয়ানের প্রকল্পে চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল স্থাপনের দাবি 1

সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর পাড় থেকে শুরু করে ১১০ একরের বিশাল এই প্রজেক্টের চারপাশে সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর দ্বারা আবৃত। এরমধ্যে নদীপাড়ে প্রজেক্টের উপরে উঠলেই এক নজরে দেখা মিলে অপরূপ সৌন্দর্যের প্রকৃতি। চারদিকে ছয়টি বিশাল গেট, সীমানা প্রাচীর এবং একটি রাস্তা নির্মাণ করা রয়েছে। রয়েছে ১১০ একর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার উপযোগী বিশাল জেনারেটর ব্যবস্থা। তবে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে নানা উদ্যোগের কথা শুনা গেলেও কোন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়নি এই প্রজেক্টে। অবহেলার কারণে পাহাড়ি এলাকায় ঝোপঝাড় এবং আগাছা দেখা গেছে।

মো. ইউসুফ নামে এক স্থানীয় যুবক বলেন, কয়েক বছর আগে এই প্রজেক্ট এলাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭ হাজার কোটি টাকা অর্থায়নে একটি বিশ্বমানের নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা শোনা গিয়েছিল। এই উপলক্ষে, ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু প্রকল্পটি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়নি। চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল স্থাপনের জন্য এরচেয়ে উপযোগী জায়গা সম্ভবত পুরো বাংলাদেশে আর একটিও নেই।

বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, মাত্র এক টাকা মুল্যে আরব আমিরাতের তৎকালিন আমির সুলতান আল নাহিয়ানকে উপহার হিসেবে এই জায়গাটি দেয়া হয়েছে। এই ১১০ একর ভূমি এখনও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জমি দেয়ার কারণে বেতাগীর শত শত মানুষ বসত ভিটা হারিয়েছে। প্রজেক্টের আশেপাশের গুনগুনিয়া বেতাগী মৌজা, চেংখালী মৌজা, কাউখালী মৌজা, তিনসৌদিয়া মৌজার শত শত একর ফসলি জমি ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। ইতিপূর্বে হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হলে স্থানীয়রা খুশি হয়েছিলো। কিন্তু তা আবার না হওয়ায় স্থানীয়রা হতাশ হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস মহোদয়ের বাড়ি আমাদের পার্শ্ববর্তী হাটহাজারী উপজেলায়। তার বাড়ি থেকে কাপ্তাই সড়কপথেই এই প্রজেক্টের অবস্থান কাছাকাছি। তাই প্রতিবেশী হিসেবে তার প্রতি আমরা আশাবাদী। চারপাশে নদী ও সড়কপথে চমৎকার অবস্থানের কারণে এই প্রজেক্টে সহজেই আসা যাবে। এখানে হাসপাতাল গড়া হলে আলাদা করে জায়গা অধিগ্রহণেরও প্রয়োজন হবে না। তাই এখানে হাসপাতাল হলে অবস্থানগত কারণে অন্তত এক কোটি মানুষ দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। পার্বত্য দুর্গম এলাকার রোগীও সহজেই পৌঁছাতে পারবেন এখানে। হেলিকপ্টার নামার ব্যবস্থা থাকায় আকাশপথেও সহজ। সবমিলিয়ে এতদ অঞ্চলের বাসিন্দাদের দাবি, এই প্রজেক্টে হোক চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।