চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দেয়া ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা প্রতিবাদে সরব থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একাধিক শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া তাদের বাসার সামনে ‘বোমা বিস্ফোরণ’র অভিযোগও তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাতে তাদের বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে চবি উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাত ২টার দিকে আমার বাসার সামনে আনুমানিক ১৬-১৭ জন তরুণ ৬-৭টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আমার নাম ধরে উচ্চস্বরে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। তারা আনুমানিক ৭-৮ মিনিট অবস্থান করে।
এ সময় তারা ৩টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর তারা পশ্চিম দিকে চলে যায়। ওই সময় বাসার সামনে ডিউটিরত প্রহরীরা ও আশপাশের প্রতিবেশীরা এ অনাকাঙিক্ষত ঘটনার সাক্ষী। বাসার সামনে ইলেক্ট্রিক পোলে লাগানো সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব। এ ঘটনার পর ব্যক্তিগতভাবে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আশাকরি এ ব্যাপারে আপনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, আমি পুরো বিষয়টি উপাচার্য এবং প্রক্টরকে জানিয়েছি। আশাকরি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে। তবে প্রক্টর আমাকে বললো নেট সমস্যার কারণে সিসি ক্যামেরা ঠিক মতো কাজ করছে না। অথচ আমি খেয়াল করলাম আমার বাসার সামনের সিসি ক্যামেরাটা খুব স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
তিনি আরও বলেন, গতরাতে হামলার পরপরই দেখলাম একটা পুলিশের গাড়িও সেদিক দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের তো দায়িত্ব ছিলো এই বন্ধ ক্যাম্পাসে ৭-৮টা বাইক নিয়ে এত রাতে ঘুরে বেড়ানো, বোমা ফোটানো এসব মানুষ কারা, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর আছি, কখনো এমন কিছু হতে দেখিনি।
এছাড়া প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমানের বাসার সামনেও একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে বলে ওই শিক্ষক জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, রাত সোয়া ২টার দিকে ৭-৮টা মোটরসাইকেল নিয়ে পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটিতে আমার বাসার সামনে এসে তারা দরজায় আঘাত করতে থাকে। এ সময় তারা আমার নাম ধরে চট্টগ্রামের ভাষায় গালাগালি করে এবং ৩টা বোমা বিস্ফোরণ করে।
তিনি বলেন, সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা আজ মানববন্ধন করেছিলাম। এরপর উপাচার্যের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় আমরা সব শিক্ষকরা মিলে শিক্ষকদের বাসায় হামলার বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দিয়েছেন।
অধ্যাপক আতিয়ার রহমান বলেন, এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। অন্যায় অবিচার হতে হতে সেটা শিক্ষক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আর কত নৈরাজ্য হলে আমাদের বোধহয় হবে। এ ধরনের ঘটনা তো আগে কখনো ঘটেনি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এর সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি আমি।
জানতে চাইলে চবি প্রক্টর ড. ওহিদুল আলম বলেন, হামলার বিষয়ে মোজাম্মেল স্যার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। পাশাপাশি পুলিশকে বলে দেওয়া হচ্ছে ক্যাম্পাসে যাতে কেউ ঘোরাফেরা করলে এখন থেকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবু নোমান বলেন, শিক্ষক সমিতি বরাবর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক স্যারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগপত্র এসেছে। শিক্ষকদের বাসায় হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সাথে এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি করছি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।