রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই: হাসনাত আবদুল্লাহ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, বীর চট্টলাবাসী সবসময় ধর্মভিরু। কিন্তু আমরা দেখেছি তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সবসময় ধর্মীয় গোঁড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দাঁড়ি-টুপি যাদের রয়েছে তাদেরকে সবসময় প্রান্তিকীকরণ করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যে দাঁড়ি-টুপির মানুষগুলো সেদিন উত্তরায় নেমে এসেছিল, যাত্রাবাড়িতে দুর্গ গড়ে তুলেছিল তাদের সমন্বয়কের পরিচয় লাগেনি। উত্তরায় যারা শহীদ হয়েছিল তাদের সমন্বয়কের পরিচয় লাগেনি। ঠিক একইভাবে এ রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে আমাদের সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই, সহ সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই। এখানে যারা রয়েছে প্রত্যেকেই সমন্বয়ক, প্রত্যেকেই সহ সমন্বয়ক।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘী ময়দানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় দুর্নীতি, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আমাদের যে রাস্তা-ঘাটগুলো ছিল সে রাস্তাঘাটে অমুক দল তমুক জল ছিল না। কিন্তু আপনি যদি এখন রাস্তায় বের হন, দেখবেন দেয়াল পোস্টারে ছেপে গিয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সময়ে যেভাবে পোস্টার ছিল ঠিক একইভাবে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। শুধু ছবিগুলোর পরিবর্তন হয়েছে। আপনাদেরকে বলতে চাই ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে আপনারা সেই আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করবেন না।

তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই ছাত্র-নাগরিকের এই আন্দোলন ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে ছিলো। সুতরাং এই আন্দোলনকে দলীয়করণ করার কোন সুযোগ নেই। আমরা দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজদের বলতে চাই আপনারা দল পরিবর্তন করে আবারও নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চাইলে ছাত্র-নাগরিক মেনে নিবে না। যদি কেউ এমনটা করতে চায় ছাত্র নাগরিক আপনাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, মাঝখানে ঢাকার আন্দোলন থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন চট্টগ্রাম থেকেই পুনরায় আন্দোলন বেগবান হয়েছে। আমরা দেখেছি ওয়াসিমরা কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, শান্তরা কিভাবে রক্ত দিয়েছে। সংকটে আমরা যেভাবে একসাথে ছিলাম এখন রাষ্ট্র পূর্ণগঠনের সময়ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।আমরা সংকটকালীন সময়ে এক ছিলাম, এখনও আমাদের এক থাকতে হবে।

রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে সমন্বয়ক হওয়ার প্রয়োজন নেই: হাসনাত আবদুল্লাহ 1

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এখনো বসে নেই। ফ্যাসিবাদের দোসররা আমাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয় দেখিয়েছে। কিন্তু এটি সম্ভব হয়নি এবং সম্ভবও না। সরকার পতনের পর যখনই মন্দিরে হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তখন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা মন্দির পাহারা দিয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা নানাবেশে ফিরে আসতে চাচ্ছে। তবে আমাদের এক থাকতে হবে। আমরা বুলেটের ভয় করিনি। চট্টগ্রামে অনেকেই পুলিশ-ছাত্রলীগের গুলির সামনে বুক পেতে শহীদ হয়েছে। তারপরও মাথানত করেনি।

তিনি বলেন, পুলিশ ভাইদের বলছি আপনারা কাজে ফিরে আসুন। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি হবে। সব পুলিশ ডিবি হারুন না। যারা ভালো পুলিশ, আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করব।

এর আগে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার দুপুর থেকে লালদিঘী ময়দানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।