রোজাদারকে ইফতার করালে যে সওয়াব পাওয়া যাবে

রমজান মাস হচ্ছে মুসলমানদের সংযম ও আত্ম-পরিশোধের মাস। রোজা হচ্ছে একটি ফরজ ইবাদত। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা সেহরিতে হালাল খাবার খেয়ে সূর্যাস্তের পর ইফতার পর্যন্ত উপবাস থাকে। রমজানে সেহরি ও ইফতার দুটোই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেহরি যেমন বরকত ও কল্যাণের কাজ ঠিক তেমনই আবার ইফতারও ফজিলতপূর্ণ সওয়াবের কাজ।

এছাড়াও কেউ কাউকে ইফতার করালে তার জন্য রয়েছে অতিরিক্ত সওয়াব ও তাৎপর্য। এতে ইফতার গ্রহণকারী ও ইফতারের আয়োজনকারী কারোরই সওয়াব কমে না। আর পবিত্র রমজানে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নেক কাজের প্রতিদান অনেকগুণ বাড়িয়ে দেন। অপর ভাইকে ইফতার করানো একটি বিশেষ নেক আমল।

রোজাদারকে ইফতার করানোর মধ্যে রয়েছে সীমাহীন সওয়াব। হজরত সালমান (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, এর দ্বারা তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।

আর রোজাদারের সমপরিমাণ নেকি তাকে দান করা হবে অথচ রোজাদারের প্রাপ্য নেকি একটুও কমানো হবে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। এবং রোজাদারের সওয়াবও কমানো হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)

সাহাবাগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আমাদের মধ্যে সকলের তো রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সংগতি নেই! রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে কেউ কোনো রোজাদারকে একটি মাত্র খেজুর দিয়ে বা পানি পান করিয়ে অথবা এক ঢোক দুধ দিয়ে ইফতার করাবে, মহান আল্লাহ তাকে এই সওয়াব দান করবেন।

ইফতারে দাওয়াত ও আতিথেয়তায় হৃদ্যতা ও ভালোবাসা বাড়ে। একইসঙ্গে উত্তম লোকের সাহচর্য অর্জিত হয়। আর মুমিনদের মধ্যে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। নবী (স.) বলেছেন-

‘তোমরা ঈমান আনা ছাড়া জান্নাত প্রবেশ করতে পারবে না। আর পারস্পারিক ভালোবাসা ছাড়া তোমাদের ঈমান হবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৪)

যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে এমন পানপাত্র থেকে, যার মিশ্রণ হবে কর্ফূর। এমন এক ঝরনা, যা থেকে আল্লাহর বান্দারা পান করবে, তারা এটিকে যথা ইচ্ছা প্রবাহিত করবে। তারা মানত পূর্ণ করে এবং সে দিনকে ভয় করে, যার অকল্যাণ হবে সুবিস্তৃত। তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি। সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা ও উত্ফুল্লতা। ’ (সুরা দাহর, আয়াত : ৫-১১)

তাই আসুন, পবিত্র রমজানে আমরা সবাই ব্যয় ও খাবারেও সংযত হয়ে আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়াই, হয়তো মহান আল্লাহ এর অসিলায় আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেবেন।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।