রাঙামাটির লংগদুতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ করাতকল। সরকারি অনুমতিপত্র কিংবা লাইসেন্সবিহীন এসব করাতকল ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত চলছে গাছ কাটা এবং পাচার। এসব কাজে জড়িয়ে আছেন স্থানীয় প্রবাভশালীরাও। বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও মাসোয়ারা নিয়ে এসব কর্মাকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগও করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, উপজেলার উল্টাছড়ি বনবিভাগে বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়ক ঘেঁষে জনবসতি স্থানে অবৈধভাবে ১৭টি করাতকল ও পাবলাখালী বনবিভাগের সীমানায় ১৩টি সহ মোট ৩০টি করাতকল গড়ে উঠেছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েকটি অবৈধ করাতকল চালু হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আইন অমান্য করে গড়ে ওঠা এসব করাতকল গত কয়েক বছরে উচ্ছেদ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বনবিভাগের নীতিমালায় (সংরক্ষিত আইন) করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ এর ৭ ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত ও অন্য যেকোনো ধরনের সরকারী বনভূমি ও আন্তর্জাতিক স্থল সীমানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যানে করাতকল স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না। অথচ এখানে লাইসেন্সবিহীন করাতকল গুলো সরকারি বনভূমির একেবারে কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছে। বন্ধ হচ্ছেনা করাতকলের ধ্বংসযজ্ঞ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা ভেঙ্গে এসব অবৈধ করাতকলে গভীর রাতে বিভিন্ন বন থেকে পাচার হয়ে আসা বিভিন্ন প্রকারের সরকার নিষিদ্ধ গাছ ভোর রাতে চেরাই করে চালাচ্ছে জমজমাট ব্যবসা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পার্বত্যাঞ্চলের বনজসম্পদ। আর এসব থেকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব।
সরেজমিন দেখা গেছে, করাতকল বিধিমালা ২০১২ এর ৭ নম্বর ধারার পুরোপুরি লঙ্ঘন করে স্থাপিত ও পরিচালিত হচ্ছে উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাবাজার সেতু সংলগ্ন যুবলীগ নেতা হাফিজুল ইসলাম মনির ও শহর আলীর যৌথ অবৈধ করাতকল। মনির ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন বলে জানা গেছে। করাতকলের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে উল্টাছড়ি বন বিভাগের আওতাধীন রিজার্ভের। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি ও ফলজ ভূমি সহ জমবসতির। তথ্যে জানা গেছে, প্রতিটি করাতকলে ৯০ শতাংশ রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ চিরাই হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাসোয়ারা আদায় করছেন ওইসব মিল মালিকদের কাছ থেকে। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, রাস্তার পাশে করাতকল থাকায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে সমস্যা হয়। যখন করাতকল চলে, তখন শব্দ দূষণসহ কাঠেরগুড়া বাতাসে ছড়িয়ে নিঃশ্বাসের সঙ্গে নাকের ভিতর দিয়ে মানব শরীরে প্রবেশ করে। এতে মানুষের শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যানবাহনের চালক ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় করাতকল থাকায় পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলার একাধিক করাতকল মালিকের সাথে কথা বললে তারা জানান, এ উপজেলাতে করাতকলের জন্য কোনো লাইসেন্স দেয় না কর্তৃপক্ষ। বৈধ অনুমতি না থাকলেও সরকার নিষিদ্ধ কোন প্রকার গাছ কাটায় না বলে দাবি করে তারা।
ডাঙ্গা বাজারে সদ্য গড়ে ওঠা করাতকল মালিক মনির বলেন, অনুমতিপত্র পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে তার করাতকলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে অনুমতিপত্র না পাওয়া গেলে বাকিগুলো যেভাবে চলবে তারটাও একইভাবে চলবে বলে জানান।
মাসিক মোটা অংকের মাসোয়ারার কথা অস্বীকার করে উল্টাছড়ি বন কর্মকর্তা মাহাবুব উল আলম বলেন, মিল মালিকদের থেকে মাসোয়ারা নেওয়ার কথা ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, অবৈধ স’মিল গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। ইতোমধ্য কয়েকটি করাতকলে অভিযান পরিচালনা করে ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করেছেন। দ্রুত এসব অবৈধ করাতকল উচ্ছেদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।