রাঙামাটির লংগদুতে ৫ শতাধিক কৃষকের নামে সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙামাটি জেলা কার্যালয়েও অনুলিপি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকও বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাঙামাটির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবু হানিফ এই নির্দেশ দেন।
প্রকাশিত সংবাদের বিষয় আলোকপাত করে আদালতের লিখিত আদেশে বলা হয়, একটি সংঘবন্ধ চক্র ব্যাংকে রক্ষিত জনগণের মূল্যবান অর্থ আত্মসাৎ করা বা বেআইনী কার্যকলাপে ব্যবহারের জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা ও ভুয়া ঋণ গ্রহণের কাগজপত্র তৈরি করে অর্থ উত্তোলন করে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষকে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যা বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুসারে ফৌজদারী অপরাধের আওতায় পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত করে জরুরী ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পিবিআই চট্টগ্রামকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক কৃষকের নামে ‘ভূয়া ঋণ’ দেখানোর অভিযোগ
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি জানতে পারি বিষয়টি নিয়ে কোন মামলা হয়নি। একজন সচেতন নাগরিক ও একজন আইনজীবী হিসেবে আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেই। আমি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সুবিচার পাওয়ার লক্ষ্যে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আদালত আমার অভিযোগটি আমলে নিয়ে উক্ত আদেশ প্রদান করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছে সেখানে বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যাদের নামে ঋণ তোলা হয়েছে তারা সবাই নিন্মবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। আমি চাই ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায় বিচার পাক এবং প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটির দুর্গম লংগদু উপজেলায় জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে প্রায় ৫০৬ জন প্রান্তিক কৃষকের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিগত ১০-১২ বছর আগে সোনালী ব্যাংকের কতিপয় ব্যাংক কর্মকর্তা, সোনালী ব্যাংকের ফিল্ড অফিসার, তৎকালীন ব্যবস্থাপক, স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি এবং দালাল চক্রের প্রতারকরা পরস্পর যোগসাজশে সেসময় কৃষি ঋণ প্রদানের নামে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। যার সুদাসল বর্তমানে ৩০ কোটি টাকা প্রায়।
এই ভুয়া ঋণের বিরুদ্ধে গত ১৪ জানুয়ারি লংগদু উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোনালী ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগীরা। সেখানে ভুয়া ঋণের দায় থেকে মুক্তি ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পরে এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে আদালত এই নির্দেশনা দেন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।